মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গত ১ মাসে এলসি কমেছে ৮২ কোটি ডলার, দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি


প্রকাশের সময় :২৫ জুলাই, ২০২২ ৮:০৫ : পূর্বাহ্ণ

এম.এইচ মুরাদঃ

দেশে ডলারের চাহিদা সামাল দিতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। কমছে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ৭৩৮ কোটি ২৬ লাখ (৭.৩৮ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগের মাসে ৮২০ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। এর অর্থ এক মাসের ব্যবধানে প্রায় ৮২ কোটি ডলার সাশ্রয় হয়েছে।

আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে এলসি খোলার পরিমাণ কমছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনা মহামারির সঙ্গে ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ লফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। যার চাপ পড়ে অর্থনীতিতে। আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স না বাড়ায় বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এটি দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল। অস্থির হয়ে উঠেছিল মুদ্রাবাজার, এখনও আছে সেই অস্থিরতা। এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা ১১ শতাংশের মতো দর হারিয়েছে।

গত বছরের ২১ জুলাই আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। বছর ধরে বাড়তে বাড়তে রোববার তা উঠেছে ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সায়।

আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৭ বিলিয়ন পেরিয়ে গেছে। আমদানি খরচ বাড়ায় অর্থনীতির আরেক স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উঠেছে, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

এ পরিস্থিতিতে পণ্য আমদানিতে এলসি কমতে শুরু করায় অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন।

তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি কমাতে একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়েছে। তারই ইতিবাচক ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে আমদানি আরও কমবে বলে মনে হচ্ছে। কেননা জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। খাদ্যপণ্যসহ অন্য পণ্যের দামও বিশ্ববাজারে নিম্নমুখী। মনে হচ্ছে সংকট কেটে যাবে।’

সরকার ব্যয় সংকোচনের জন্য বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ অন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে শিগগিরই তারও সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন মঞ্জুর হোসেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানির জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা মোট ৯ হাজার ২২৩ কোটি ৪৯ লাখ (৯২.২৩ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৭০৩ কোটি ৭৪ লাখ (৬৭.০৩ বিলিয়ন) ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি খাতে খরচ বাড়তে থাকে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ৪৯৪ কোটি ৬৪ লাখ (৪.৯৪ বিলিরয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়। আগস্টে তা এক লাফে ৪৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে ৭১৮ কোটি ৪১ ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে ৭৭৭ কোটি ডলার দাঁড়ায়। অক্টোবরে এলসি খোলা হয় ৭৪২ কোটি ১৬ লাখ ডলারের।

নভেম্বরে এলসি খোলা হয় ৮১০ কোটি ৬৯ লাখ (৮.১০ বিলিয়ন) ডলারের। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক মাসে এলসি খোলার পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ওই মাসে। ডিসেম্বরে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৮৬৪ কোটি ৬২ লাখ ডলার।

চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৮২৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে অবশ্য কমে ৭১০ কোটি ডলারে নেমে আসে। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় এলসি খোলার পরিমাণও কমেছিল বলে জানান ব্যাংকাররা।

মার্চে ৮৯০ কোটি ২৬ লাখ ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি এলসি খোলার পরিমাণ।

এপ্রিলে তা কমে ৮২৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলারে নেমে আসে। মে মাসে এলসি খোলা হয় ৮২০ ডলারের। সর্বশেষ জুনে ৮২ কোটি ডলার বা ১০ শতাংশ কমে ৭৩৮ কোটি ২৭ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।

আমদানি কমাতে প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয় ১৭ এপ্রিল। ওইদিন এক সার্কুলারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাতসংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি) নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়।

এরপর ১০ মে বিলাসপণ্য আমদানি কমাতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে আরেকটি সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সার্কুলারে বলা হয়, সকল ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।

রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। ওই সময় ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

ট্যাগ :