মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালনধামে সাধুর হাট


প্রকাশের সময় :৯ মার্চ, ২০২০ ৮:১১ : পূর্বাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ফকির ইদ্রিস সাঁই। প্রবীণ লালন ভক্ত। এসেছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর গ্রাম থেকে। একাগ্রচিত্তে গেয়ে চলেছেন, আর কি হবে এমন জনম বসবো সাধুর মেলে। হেলায় হেলায় দিন বয়ে যায় ঘিরে নিল কালে।

ফকির ইদ্রিস সাঁই’র মত অসংখ্য বাউল, সাধু, গুরু, বৈষ্ণবের আগমনে এখন মুখরিত কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়া বাড়ি, লালনধাম। অনুষ্ঠানের প্রথম দিনেই একতারা-দোতারা, ঢোল-খোল, বাঁশি আর প্রেমজুড়ির তালে মাতোয়ার হয়ে উঠছেন বাউলরা। ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথি তথা দোল পূর্ণিমায় শত বছর ধরে এভাবেই বাউল সাধকরা জড়ো হন বাউলতীর্থে। এবার ২০ মার্চে পূর্ণিমা তিথি হওয়ায় এর কদিন আগে থেকে ভক্তরা আসতে শুরু করেন আখড়া বাড়িতে।

দাওয়াত নেই, পত্র নেই, তবুও এক উদাসী টানে মানুষ ছুটে এসেছেন দলে দলে, হাজারে হাজারে। যেখানে মিলন ঘটেছে নানা ধর্ম, নানা বর্ণের মানুষের। কেউ এসেছেন ধবধবে সাদা পোশাকে, আবার কেউ গেরুয়া বসনে। সাঁইজির টানে এ ধামে বাউল ছাড়াও সাধারণ দর্শনার্থীর ভিড় লেগেছে। ‘বাড়ির পাশে আরশী নগর, মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই কুল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, সত্য বল সুপথে চল, এলাহি আলামিন গো আলা বাদশা আলামপনা তুমি’ এ রকম লালন গীতের সুরের মূর্ছনায় তারা মাতিয়ে তুলেছেন বাউলধাম। লালন মাজারের আশপাশে ও মরা কালী নদীর তীর ধরে বাউলরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করেছেন গানে গানে। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে সুর মেলাতে ভুল করছেন না ভক্তরাও।

লালন সাঁইজি জীবিত থাকাকালে ফাল্গুন মাসের শেষে দোল পূর্ণিমা তিথিতে কালী নদীর তীরে শিষ্যদের নিয়ে রাতভর গান-বাজনা ও তত্ত্ব আলোচনা করতেন, যা কালক্রমে পরিণত হয়েছে লালন স্মরণোৎসবে। দূর-দূরান্ত থেকে সাদা বসনে বাউল সাধকরা এসেছেন দলে দলে। ক্ষণে ক্ষণেই খণ্ড খণ্ড মজমা থেকে লালন গানে প্রকাশিত হচ্ছে ভাববাদী ঢেউ। অনেকেই গাইছেন, নাচছেন। কারও উদোম গা। গলায় বিচিত্র বর্ণ ও আকারের পাথরের মালা। হাতে বিশেষ ধরনের লাঠি ও বাদ্যযন্ত্র। লালন ধামের ভেতর ও বাইরে নিজেদের পছন্দমতো জায়গা করে নিয়ে গান-বাজনা করছেন তারা। বাদ্যযন্ত্রে তুলছেন হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া লালনগীতি। আখড়ার একটি দল থামছে তো অন্যটি জমিয়ে রাখছে চারপাশ।

লালন ধামের ভেতর পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী বাউল কামিরন তার সহযোগীদের নিয়ে একতারা হাতে নেচে-গেয়ে সাঁইজির বন্দনা করছিলেন। কথার পিঠে কথা আর মনের ভেতর আধাত্মবাদ নিয়ে গাইছিলেন তিনি। কামিরন বলেন, লালন নিজেও এভাবে গান করতেন। তার কাছে ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাতের বিচার ছিল না। পুরুষের পাশাপাশি আশ্রয়হীন নারীদের তিনি বাঁচার সুযোগ করে দিতেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে গাইতেন, নাচতেন।

কোনো এক অচিন গাঁয়ের অচেনা মানুষ ফকির লালন এখানে বসেই জীবনভর সন্ধান করেছেন, অচিন পাখির সহজ কথায় বেঁধেছেন জীবনের গভীরতম গান। আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে ভক্ত-অনুসারীরা এখন এখানে আরও বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা ও কোনো সমস্যা হয় কি-না দেখার জন্য লালন একাডেমির সদস্যরা সদা সতর্ক। তবে লালন একাডেমির পক্ষ থেকে বাউলদের অধিবাস সেবা, বাল্যসেবা বা বালকসেবা ও পূর্ণসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাউলরা একসঙ্গে বসে গ্রহণ করেন সেবা। সমাধিতে গাঁদা ফুল, আতর, গোলাপ ছড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন হাজারো শিষ্য-ভক্ত।

উৎসবে শামিল হতে খুলনা থেকে এসেছেন নব-বিবাহিত দম্পতি। সৌদি প্রবাসী স্বামী আব্দুল গাফফার বলেন, ‘লালনের গানে রয়েছে মানবতা বোধ, অহিংস ভাব। অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণে দিন দিন তার গানের ভক্ত ও অনুসারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্ত্রী নারগিস পারভিন বলেন, লালন সাঁইজির এ আদর্শ অনুসরণ করলে দেশে হানাহানি বন্ধ হয়ে যেত। তিনি লালনের গান কবিতা আকারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

ট্যাগ :