বাংলাদেশ, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৪ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিরসরাই পৌরসদরে সরকারি রাস্তা নির্মাণে বাঁধা


প্রকাশের সময় :৩০ অক্টোবর, ২০২৫ ৯:৫৫ : পূর্বাহ্ণ


মিরসরাই প্রতিনিধিঃ
মিরসরাই পৌরসদরে সদর ভূমি অফিস সংলগ্ন রাস্তা পুনঃনির্মাণ কাজে বাধা সৃষ্টি করতে চাওয়া একটি পক্ষের আইনগত দাবিকে আদালত খারিজ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এলজিসিআরআরপি প্রকল্পের আওতায় রাস্তার আরসিসি নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও স্থানীয় মুছা মিয়া গং উত্তরাধিকার সূত্রে এক শতক জমির মালিকানা দাবি করে কাজ বন্ধ করতে চাইলে স্থানীয় ও সিনিয়র আদালত উভয়ই তাদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। ফলে রাস্তা নির্মাণে আর কোনো বাধা নেই।
জানা গেছে, সম্প্রতি এলজিসিআরআরপি’ প্রকল্পের আওতায় মিরসরাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সদর ভ‚মি অফিস সংলগ্ন রাস্তাটি পুনঃনির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় মুছা মিয়া গং উত্তরাধিকারী সূত্রে এক (১) শতক জায়গা রয়েছে মর্মে দাবি তুলে রাস্তা নির্মাণ কাজে বাধা দেন।
স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সদর ভ‚মি অফিস সংলগ্ন ইটের নির্মিত রাস্তাটি শত বৎসর পুরানো বি.এস.জরিপ সিটভুক্ত চলাচলের পথ যা বিএস ৮১৮ নং খতিয়ানে ৫৬১০২ নং দাগে চলাচলের পথ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। উক্ত রাস্তা দিয়ে আশপাশের বাসিন্দা ছাড়াও প্রতিদিন শত শত সর্বসাধারণ ও যানবাহন চলাচল করে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতোপূর্বে উক্ত রাস্তাটিতে ইট বসানো হয়েছিলো। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এর এলজিসিআরআরপি’ প্রকল্পের আওতায় মিরসরাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পুনরায় উক্ত রাস্তাটি আর. সি. সি. দ্বারা নির্মাণের জন্য ই-টেন্ডার ইস্যু করেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করলে, একটি পক্ষ নির্মাণ কাজে বাধা দেন। পক্ষটির দাবি উক্ত রাস্তার মধ্যে তাদের এক শতক উত্তরাধিকার সূত্রে জায়গা রয়েছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বাদীপক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে তাদের দাবি নাকচ করে দেন। পরবর্তীতে বাদীপক্ষ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম ও মিরসরাই পৌরসভা প্রশাসককে বিবাদী করে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন (মিরসরাই সহকারি জজ আদালত, মামলা নং ১১৯/২০২৪)। আদালত বাদি পক্ষের নিষেধাজ্ঞার আবেদন নামঞ্জুর করে গত ২২ জানুয়ারি আদেশ দেন (আদেশ নং- ০৬)।
আদালত উক্ত আদেশে উল্লেখ করেন, বাদীপক্ষের উক্ত রাস্তায় কোন স্বত্ত¡ নেই”। উক্ত আদেশে আরো উল্লেখ করা হয় সরকারি রাস্তা নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, এতে রাষ্ট্রের উন্নয়নকার্য বাধাগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে বাদীপক্ষ উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে সিনিয়র জেলা জজ আদালতে সিভিল রিভিশন দাখিল করেন (অতিরিক্ত জেলা জজ ৭ আদালত, মামলা নং ৬৫/২০২৫)। জেলা জজ আদালত ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে ১২ নং আদেশ মূলে উক্ত সিভিল রিভিশনের আবেদন খারিজ বা নামঞ্জুর করে দেন এবং নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তাটি নির্মাণের লক্ষ্যে রাস্তার ইট উত্তোলন ও মাটি খনন করায় নির্মানাধীন রাস্তাটিতে পানি জমে থাকায় সার্বক্ষণ কাদামক্ত হয়ে থাকে। এতে এলাকাবাসীর বিশেষ করে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বর্তমান চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উক্ত মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী বলেন, এই মামলার কোন ভিত্তি নেই, এটি সম্পূর্ণ হয়রানি মূলক মামলা। তাই নিম্ন আদালত ও জেলা জজ আদালতেও এ মামলা খারিজ হয়ে যায়। এখন আর উক্ত রাস্তা নির্মাণে কোন বাধা নেই।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোঃ রেজাউল করিম (সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর) বলেন, বাদীপক্ষ দাবিকৃত রাস্তার জায়গার অনুকূলে কোন আইনগত দলিল প্রদর্শন করতে পারেনি, তাছাড়া বাদীপক্ষের পূর্বপুরুষ নিজেই উক্ত জায়গা দলিল মূলে অন্যের নিকট হস্তান্তর করে দিয়েছেন। অর্থাৎ বাদীপক্ষে কোন উক্ত জায়গায় সত্ত নেই। সেজন্য উভয় আদালতে এই মামলা খারিজ হয়ে যায়।
উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও মিরসরাই পৌরসভার প্রশাসক আলাউদ্দিন কাদের বলেন, মিরসরাই পৌরসভা কর্তৃক বিশ্বব্যাংকের এলজিসিআরআরপি প্রকল্পের আওতায় রাস্তার আরসিসি নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও স্থানীয় মুছা মিয়া গং উত্তরাধিকার সূত্রে এক শতক জমির মালিকানা দাবি করে বাংলাদেশ সরকার গং কে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ স্থানীয় ও সিনিয়র আদালত উভয় আদালতে তাদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। বিজ্ঞ আদালতের আদেশনামার কপি পেলে বন্ধ থাকা রাস্তার উন্নয়ন কাজ পুনরায় চালু করা হবে।

সি এস/ মি এস