তারেক চৌধুরী:
চলতি বছরের ১৭ মে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বের হন ফুলগাজী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মিতা রানী। সেদিন বাসায় ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া ব্রিজ এলাকায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে তিনি নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীর দেওয়া তথ্যে দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ প্রশাসন।
গত ২৭ আগস্ট ফেনীর দাগনভূঞায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হোসেন দুর্জয়। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ডান পায়ে তিনটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাত লাখ টাকার বেশি চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়েছে। তবুও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি। এখন শয্যাশায়ী থেকে কখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব, তাও জানি না।
জেলা পুলিশ বিভাগের একটি তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হন। চলতি বছরের একই সময়ে এসে যা আরও ঊর্ধ্বমুখী
শুধু মিতা কিংবা দুর্জয়ই নন, এমন আরও অনেক ঘটনার চিত্র দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ২৬ কিলোমিটার, ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কসহ জেলার অন্য সড়কগুলোতে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসেই এসব সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৬ জন। বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক ও ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে দীর্ঘ হচ্ছে এ মৃত্যুর মিছিল।
ফাজিলপুর ও মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফাজিলপুর অংশে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৩১টি দুর্ঘটনার তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ১৫ জন নিহত ও ৪১ জন আহত হয়েছেন। সড়কে বিভিন্ন অপরাধে নয়টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলায় ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র ও দুটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা ও অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া, মহিপাল হাইওয়ে থানা এলাকায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন নয়জন। এসব ঘটনায় ৩৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, অন্য মামলাগুলো তদন্তাধীন।
শুধু মিতা কিংবা দুর্জয়ই নন, এমন আরও অনেক ঘটনার চিত্র দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ২৬ কিলোমিটার, ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কসহ জেলার অন্য সড়কগুলোতে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসেই এসব সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৬ জন। বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক ও ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে দীর্ঘ হচ্ছে এ মৃত্যুর মিছিল
একই সময়ে শহরের সদর হাসপাতাল মোড়, ফেনী-সোনাগাজী সড়কের কলঘর ও ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক এলাকায় আরও তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, উপজেলাগুলোর অনেক দুর্ঘটনার তথ্য পরিসংখ্যানে আসে না। এজন্য সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
এদিকে, এসব দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই পথচারী, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে জেলা পুলিশ বিভাগের একটি তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হন। চলতি বছরের একই সময়ে এসে যা আরও ঊর্ধ্বমুখী।
এখন মানুষের সঙ্গে সড়কে অনেক যানবাহন বেড়েছে। বেড়েছে দুর্ঘটনাও। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মহাসড়কে অবৈধ যানচলাচল প্রতিরোধের বিষয়টি কিছুটা স্থবির থাকলেও এখন পুরোদমে চলছে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ ও থ্রি-হুইলার নিয়ন্ত্রণেও নিয়মিত মামলা হচ্ছেখাইরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার, কুমিল্লা রিজিয়ন
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা), ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বেপরোয়া গতি। চালকের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকা, শিক্ষার অভাব, ঘুম নিয়ে গাড়ি চালানো, সড়কে যানচলাচলে ব্যবহৃত চিহ্নগুলো না চেনা দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া, সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার, যাত্রীদের অসচেতনতা ও চালকদের বেপরোয়া গতির মানসিকতায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিষয়গুলো তদারকিতে হাইওয়ে পুলিশ বা থানা পুলিশের খুব বেশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের যথাযথ নজরদারি থাকলে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিসচার সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো এখানে অনেক বাঁক রয়েছে। পাশাপাশি বাজার ও জনবহুল এলাকাও দায়ী। এছাড়া, সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোর বেশিরভাগই ফিটনেসবিহীন এবং চালকরাও অদক্ষ। এতে মালিকপক্ষের দায় অনেক বেশি।’
২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২২ অক্টোবর জাতীয়ভাবে নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা), ফেনী জেলা কমিটির উদ্যোগে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রচারপত্র বিতরণ ও চালকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, ‘মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি।
দুর্ঘটনা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে যা বলছেন হাইওয়ে পুলিশ
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আশঙ্কাজনকভাবে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে ফেনীর সচেতন মহল। এ বিষয়ে কথা হয় ফাজিলপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ জাকারিয়ার সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘চালকরা সচেতন হলে এবং ট্রাফিক আইন মেনে চললে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। বেপরোয়া গতির কারণে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে না পারায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ সড়কে কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকের দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। অতিরিক্ত গতি, ওভারলোড ও ঘুম চোখে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’
একই প্রসঙ্গে মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ছোট যানচলাচলের জন্য সার্ভিস লেন না থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। মহাসড়কে এ