প্রগতির পথে,জীবনের গান, সকল অশুভ শক্তির হবে অবসান” এই আহবান প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ
ডেস্ক নিউজঃ
সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবং প্রগতির লড়াইকে দৃঢ় করার দৃপ্ত শপথের মধ্য দিয়ে উদীচীর ৫৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। বুধবার, সন্ধ্যা ৭ টায়,উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে জাতীয় সংগীত ও সংগটন সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর বর্তমান এবং সাবেক শিল্পীকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের অংশগ্রহণে এক আনন্দময় পরিবেশের সৃষ্টি হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমির গ্যালারী প্রাঙ্গন। কথামালায় অংশ নিয়ে অতিথি এবং শিল্পীকর্মীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রতিবাদী উচ্চারণ করেন,এবং গানের সুরে, কবিতার ছন্দে ও কথনে ব্যক্ত করেন সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়ে অশুভ শক্তিকে রুখে দেওয়ার প্রত্যয়। প্রগতির পথে জীবনের জয়গান গেয়ে সকল শোষিত নিপীড়িত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে বেগবান করার দৃপ্ত ধ্বনি উচ্চারিত হয়। আলোচনা হতে।

কথামালায় সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক ও, প্রাবন্ধিক জসীম চৌধুরী সবুজ। উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ সাধারন সম্পাদক জয়তী ঘোষের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট অসীম বিকাশ দাশ। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট নাট্যকার লেখক ও কবি অভীক ওসমান,, প্রবীন নারীনেত্রী নুরজাহান খান, দৃষ্টি’র উপদেষ্টা বৃজেট,ডায়েস, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সৈয়দ আয়াজ মাবুদ,আবৃতি সংগঠন প্রমার সভাপতি রাশেদ হাসান, কবি ও প্রকাশক মুহাম্মদ নুরুল আবসার, খেলাঘর সংগঠক ওসমান গনি চৌধুরী বাবুল, গ্রুপ থিয়েটার ফোরাম এর সভাপতি সুচরিত দাশ খোকন, গ্রুপ থিয়েটার ফোরাম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সাধারন সম্পাদক মোরশেদুল আলম,স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মানস শেখর,উদীচী বোয়ালখালী উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দাশ প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক পর্বে একক, এবং দলীয়ভাবে সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের শিল্পীকর্মীরা।আমন্ত্রিত সংঘটন হিসেবে সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম ও প্রমা আবৃত্তি সংগঠন।
আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন,সত্য ও সুন্দরের আকাঙ্খাকে ধারণ করে ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর উদীচীর যাত্রা শুরু হয়। এরপর সংস্কৃতির সেই জাগরিত শক্তি দিয়ে অব্যাহত রয়েছে মুক্ত মানুষের মুক্ত পৃথিবী গড়ার সংগ্রাম। কালের পরিক্রমায় সংগ্রামী সেই সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার ৫৬ বছর পূর্ণ করলো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। দীর্ঘ পথচলার আনন্দে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সংগঠনের কর্মীদের মাঝে বয়ে যায় প্রাণের উচ্ছ্বাস। সেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ছিল অপশক্তির বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার সংগ্রামী প্রকাশ।বক্তারা বলেন,- মুক্তমত ও সংস্কৃতিচর্চার অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে হবে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধসম্পন্ন সাংস্কৃতিক বলয় কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নের নামে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী সকল প্রকল্প বাতিল ও উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিল্পকলাবিষয়ক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করতে হবে। সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ এবং বিভেদ, বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী লেখা ও উপাদান পাঠ্যপুস্তক থেকে তুলে নিতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, সাম্য, স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং মানবিক সমাজ নির্মাণে উৎসর্গিত লাখো লাখো মানুষের রক্তস্নাত এই দেশের মানুষের লড়াই এখনও বিদ্যমান।
উদীচীর লক্ষ্য মেহনতি মানুষের শোষণ-বঞ্চনা, দুঃখ-দুর্দশা এবং অধিকার সম্পর্কে গণসংগীতের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা। উদীচী মূলত গণসংগীতের সংগঠন হিসেবেই পরিচিত। এসব গানে থাকে শোষণের স্বরূপ উদ্ঘাটন, শোষকের স্বরূপ ও শোষণমুক্তির আন্দোলনের প্রেরণা। কৃষকের প্রয়োজনীয় উপকরণ আর পণ্যের ন্যায্যমূল্য, শ্রমিকের মজুরি, নিরন্ন মানুষের ভাতের দাবি সুরে-শব্দে উঠে এসেছে উদীচীর গানে, শিল্পীদের প্রতিবাদী কণ্ঠে। অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নিপীড়িতকে উজ্জীবিত ও সংঘবদ্ধ করেছে উদীচী তার গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এই গণসংগীতের বাণী যেন সাধারণ জনতার জন্য সহজবোধ্য হয়, সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়ে থাকে। গণ-মানুষের অধিকার আদায়ের গান তাঁদের প্রাণ স্পর্শ করতে পারলেই তা সার্থক হবে।
বাংলার চিরায়ত সুর আজ রুদ্ধ। ধর্মান্ধতার মাস্তানীর কাছে গুমরে কাঁদছে সম্প্রীতির বাংলাদেশ। সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়েই পরাভূত করতে হবে এই অপশক্তিকে। রুখে দিতে হবে অপশক্তির অপতৎপরতা। বিনির্মাণ করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সম্প্রীতির বাংলাদেশ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি / সি এস