স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাংলাদেশে এখন নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৫২। এগুলোর মধ্যে ২৩টি কেএসআরএম গ্রুপের। গত এক দশক ধরে সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে গ্রুপটি।
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং ২০০৪ সালে তাদের প্রথম জাহাজ কেনে। ‘এমভি ফাতেমা জাহান’ ছিল তাদের প্রথম জাহাজ।
বাংলাদেশে এখন নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৫২। এগুলোর মধ্যে ২৩টি কেএসআরএম গ্রুপের। আর এক দশকেই সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে জাহাজ পরিচালনা ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে গ্রুপটি।
কেএসআরএম গ্রুপের হাত ধরে ভারত, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরের জলসীমায় উড়ছে দেশের পতাকা।
এসআর শিপিংয়ের জাহাজ ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ব্রেভ রয়্যাল শিপ ম্যানেজম্যান্ট (বিডি) লিমিটেড। এসব জাহাজ প্রথম শ্রেণির হাল ও মেশিনারি ইনসিউরেন্স এবং পিঅ্যান্ডআই ক্লাবের কভারিংয়ে ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির সর্বোচ্চ মানে পরিচালনা করা হয়।
বিশ্ববাজারে সমুদ্রগামী পুরোনো জাহাজের দর এখন ক্রেতার পক্ষে জানিয়ে কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, ‘আমাদের বহরে থাকা জাহাজগুলো প্রত্যেকটি ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার। এগুলোকে সুপারম্যাক্স জাহাজ বলা হয়। আমাদের একটি সিমেন্ট কারখানা আছে। কয়েকটি জাহাজে করে সে কারখানার কাঁচামাল আনি। বাকি জাহাজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করছে।’
মেহেরুল করিম আরও বলেন, ‘সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে চাহিদা পূরণে প্রতিনিয়ত বহরে নতুন জাহাজ যুক্ত করছি। এতে একদিকে যেমন সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ছে, তেমনি বাংলাদেশি নাবিকদের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।’
চিটাগাং চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, নিজেদের পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন দেশের জাহাজ মালিকরা। কেএসআরএমের মতো গ্রুপ সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তাদের বহরে জাহাজ বাড়াচ্ছে। এতে দেশের পতাকাবাহী জাহাজ যেমন বাড়ছে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হচ্ছে।
জাহাজের নিবন্ধন প্রদানকারী সংস্থা নৌবাণিজ্য কার্যালয়ের মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পে গত এক বছরে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে সরকার। বড় জাহাজ আমদানিতে দেয়া হয়েছে শুল্ক ছাড়। দেশিয় জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ ছাড়া দেশিয় পতাকাবাহী জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রেখে আইন হয়েছে। উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার এটিও একটি কারণ।
দেশে তিন দশক আগে সরকারি খাত এগিয়ে থাকলেও এখন বেসরকারি খাতই এই সেবা শিল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সরকারি খাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ১৯৭২ সালের জুনে ‘এমভি বাংলার দূত’ জাহাজে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসার যাত্রা শুরু করে। ১০ বছরে ২৭টি জাহাজ যোগ হয় তাদের বহরে। এক পর্যায়ে তা ৩৮-তে উন্নীত হয়। তবে ১৯৯১ সালের পর এই সংস্থার বহরে নতুন কোনো জাহাজ যুক্ত হয়নি। বরং জাহাজের সংখ্যা কমে এক পর্যায়ে দুটিতে নেমে আসে।
গত দেড় বছরে চিত্র পাল্টেছে। এক হাজার ৮৪৩ কোটি টাকায় ছয়টি নতুন জাহাজ কেনে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
অন্যদিকে ১৯৭৮ সালে প্রায় ১০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ‘এমভি আল সালমা’ জাহাজ নিবন্ধনের মাধ্যমে বেসরকারি খাতে এই ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়। অ্যাটলাস শিপিং লাইনস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাউল্লাহ চৌধুরী বেসরকারি খাতে এই শিল্পের পথিকৃৎ। তবে দুই দশক আগে সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনা শিল্প থেকে সরে আসে প্রতিষ্ঠানটি।