স্টাফ রিপোর্টারঃ
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি, বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল ও শুল্ক পরিশোধ সংক্রান্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ ছিল সোমবার। এতে শতকোটি টাকার ক্ষতির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিদ্যমান সংকট নিয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসার প্রস্তাব দিলে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নেতারা। সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম (বিলু) এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সভার আহ্বান করেছে এনবিআর। আমরা তাদের আহ্বানকে সম্মান জানিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছি। আগামী ৭ তারিখ এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকের পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
এর আগে লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদণ্ড আরোপের অযৌক্তিক বিধি বাতিল, আইনানুগভাবে পণ্যমূল্য নির্ধারণ, লাইসেন্স হস্তান্তর সহজীকরণসহ আট দফা দাবিতে সোমবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। এই কর্মবিরতির কারণে দেশের প্রধান রাজস্ব আয়ের এই খাতে শতকোটি টাকা ক্ষতির কথা জানান চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার মুশফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশের রাজস্ব আয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এই হাউসে প্রায় ৩ হাজার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মরত আছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতিদিন ৭ হাজার বিল অব এন্ট্রি এবং বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হয়। এর মধ্যে আমদানি পণ্যের জন্য ২ হাজার বিল অব এন্ট্রি এবং রফতানি পণ্যের জন্য ৫ হাজার বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করা হয়। যার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে প্রতিদিন শতকোটি টাকার শুল্কায়ন হয়ে থাকে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম (বিলু) বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি কিছু বিধিবিধান সংশোধন, পণ্য চালান শুল্কায়নকালে পণ্যের এইচএস কোড ও সিপিসি নির্ধারণে প্রণীত বিভিন্ন বিতর্কিত আদেশ বাতিলের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু দাবি পূরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে আমরা সোমবার সকাল থেকে দুদিনের কর্মবিরতি পালন শুরু করেছি।
বিলু বলেন, এর আগে গত ২১ জানুয়ারি সংগঠনের পক্ষ থেকে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, এনবিআর গত বছরের জুলাই মাসে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর কর্মকর্তারা বিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে সংগঠনের নেতাদের আশ্বস্ত করেন। অথচ এ বিষয়ে ফেডারেশনের নেতারা এনবিআরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও কার্যকর কোনো সাড়া পায়নি। তাতে সারা দেশের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
চিঠিতে গত ২৮ জানুয়ারির মধ্যে বিধিবিধান সংশোধনের দাবি জানানো হয়। কিন্তু সাড়া না পেয়ে সোমবার ও মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) চট্টগ্রামসহ দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কর্মবিরতি পালন করা হবে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
সংগঠনটির আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-আমদানি ও রফতানিকারকের বকেয়া পাওনার দায় চাপিয়ে সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স নবায়ন না করার বিধি রহিত করা, উত্তরাধিকারীর কাছে লাইসেন্স হস্তান্তর সহজীকরণ, লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদণ্ড আরোপের অযৌক্তিক বিধি বাতিল, তথাকথিত মূল লাইসেন্স বাতিল হলে রেফারেন্স লাইসেন্স বাতিলের বিধি রহিতকরণ। তা ছাড়া জাতীয় স্বার্থ রাজস্ব আহরণের কার্যক্রমে দেশি-বিদেশি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কোনো কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান না করা, আমদানি ও রফতানিকারকের দায় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, আইনানুগভাবে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করা এবং অযথা জরিমানা আরোপের বাণিজ্য প্রতিবন্ধক আদেশ বাতিল।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সারা দেশে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টরা দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে অবদান রেখে চলেছেন। তাদের শ্রম-ঘামে আহরিত হচ্ছে রাজস্ব। তবে তাদের এই অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। প্রণীত বিধিমালা ২০২০, আদেশ নির্দেশনায় তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব প্রকাশিত হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত।
নেতারা বলেন, ব্যবসায়ীদের দমন করার জন্য বাণিজ্যবিরোধী আইন বাস্তবায়ন করতে চাইছে এনবিআর কর্মকতারা। ঘুষের টাকায় তারা বিশাল অর্থবিত্তের মালিক। আর বলে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের টাকা বেশি। কিন্তু তারা টাকার জন্য পদে পদে আমাদের হয়রানি করে আসছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন করা হবে।