স্টাফ রিপোর্টারঃ
অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তুহিন সিদ্দিকী অমির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এরই মধ্যে এ দুজনের নানা অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসছে।
পরীমনি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি গণমাধ্যমে সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাদের মতে, অমি পরিকল্পিতভাবে সেই রাতে পরীমনিকে বোট ক্লাবে নিয়ে যায়।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে
পরীমনি বলেন, ‘জিমির কলেজ জীবনের বন্ধু অমি। সেই হিসেবে আমার সঙ্গে দুই বছর ধরে ‘হ্যাই হ্যালো’। তবে ওই রকম ক্লোজড না আমরা। সিঙ্গাপুর ট্রেইনিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন অমি; এর বাইরে খুব বেশি কিছু জানা নেই। আমার নানার অসুস্থতার সংবাদে ৮ জুন অমি বনানীর বাসায় আসে। নানার জন্য অনেক খাবারও নিয়ে আসে। রাতে আমার সঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে বসতে চায় অমি। কিন্তু আমি তাকে সময় দিতে পারিনি। অন্য এক দিন আসতে বলি। এর আগেও কয়েকবার কিছু একটা নিয়ে বসবে বলে সময় চেয়েছিল। এরপর ৯ জুন জিমিকে ফোন করে সময় চায় অমি। তখন তাকে রাত ৯টায় আসতে বলি। কিন্তু অমি রাত পৌনে ১১টার দিকে আসে।’
পরীমনি জানান, ‘অমি টাকা বিনিয়োগ করবে আর পরীমনি বিনিয়োগের একটা পার্ট হবে- এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিষয়টি আসলে কী সেটি নিয়ে আলোচনা চলছিল। এর মধ্যেই অমির একটা ফোন আসে। অমি জানায়, তার মা অসুস্থ। ওষুধ কিনে নিয়ে যেতে হবে। বাসার সবাই বলল, তাকে চলে যেতে। কিন্তু আমি মানবিকভাবে যেতে দিতে পারিনি। বলেছি চলো আমরা তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি। এরপর আমার ছোট বোন, আমি ও জিমি যে যে অবস্থায় ছিলাম সেভাবেই বেরিয়ে পড়ি। আমরা উত্তরা গিয়ে একটি ফার্মেসিতে নেমে ওষুধ কিনি। এরপর অমির বাসার দিকে রওনা হই।’
‘পথে বোট ক্লাবের সামনে অমি গাড়ি থামাতে বলে। সে বলে দুই মিনিট কাজ আছে। আমি সেরে আসছি। অমি ভেতরে যেতে চায়। কিন্তু গেট বন্ধ থাকায় ফিরে আসে গাড়ির কাছে। একটা ফোন করে কী যেন জানায়! তখন গেট খুলে দেয়। এরপর সে আবার ভেতরে যায়। যাওয়ার সময় অমি জানায় তোমরাও নামতে পার। ক্লাবটা অনেক সুন্দর। আমার বোন বনি অসুস্থবোধ করায় তার ওয়াশরুমের প্রয়োজন ছিল। এজন্য জিমিকে গাড়িতে রেখে বনিকে নিয়ে ক্লাবের ভেতরে যাই। এরপর দুজন লোক এসে বলেন, ম্যাডাম বসেন। অমিও বলে কফি খাও। কফি এনে দিলে জিমি এসে তা টেস্ট করে বলে এটা কফি নয় অন্য কিছু। পরে খেতে না চাইলে নাসির উদ্দিন মাহমুদ জোর করে মুখে বোতল ঢুকিয়ে দিয়ে মদ খাওয়ান। এরপর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন। একপর্যায়ে ক্লাবের উপরে নিয়ে গিয়ে সেখানে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে পরীমনি বলেন, ‘অমি আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছে যে তাকে সন্দেহ করার অবকাশ ছিল না। সে এমন কাজ করবে তা বিশ্বাসই হয়নি। অমির সঙ্গে নাসিরের আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল। ঘটনা যে পূর্বপরিকল্পিত ছিল তা স্পষ্ট।’
ভিডিও করলে মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেন নাসির : জিমি
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ঘটনার বর্ণনা দেন পরীমনির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিও। তিনি বলেন, ‘পরীমনিকে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। তার মোবাইল ছুড়ে ফেলা হয়।’
জিমি অভিযোগ করেন, ‘নাসির উদ্দিন মাহমুদ গালাগালি করতে থাকলে আমি যখন ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে মোবাইলের ক্যামেরা চালু করি, তখন নাসির আমাকেও গালাগাল করেন। ততক্ষণে আমার মোবাইলে ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও রেকর্ড হয়েছিল। তখন উনি (নাসির) ফোনটা হাতে নিয়ে আমাদের দুজনকেই আক্রমণ করেন। এর মধ্যে আপির (পরীমনি) ফোনটা তার কাছে রেখে চলে আসি। ওরা ভেবেছেন, ওই ফোনেই ভিডিওটা করেছি। ফোনটা উড়ায়ে ফেলে দিয়েছেন। পরে এক ওয়েটারের সহায়তায় ফোনটি উদ্ধার করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওরা লাইট বন্ধ করে দেন। আপির অক্সিজেন লেভেল কমে আসছে; এসিও বন্ধ। ওয়েটারদের বলছিলাম, আপি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না, এসিটা ছাড়েন। তখন ওয়েটার একজন এসি ছাড়ে। আপি নিঃশ্বাসই নিতে পারছিলেন না। তখন আমি ধরে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসি।’
আদম পাচার করে কোটি কোটি টাকার মালিক অমি
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য একাধিক সূত্র জানায়, ক্লাব পাড়ায় অমিও একজন পরিচিত মুখ। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। অনেক বছর ধরে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরে কাজ করে ঢাকার আশপাশে জমি ক্রয় করেন। বর্তমানে তার অঢেল সম্পদ রয়েছে। একমাত্র সন্তান হওয়ায় এর উত্তরাধিকারী অমি।
অমি ৭-৮ বছর আগে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক হন। এরপর দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করেন। এ সুযোগে আদম পাচার করে প্রচুর অর্থ আয় করেন। মাসিক বেতনে অবিবাহিত মেয়েদের রেখে ভাড়া দিতেন উচ্চ মূল্যে। আর থেকেও আয় করতেন কোটি কোটি টাকা। এই অর্থের দাপটে অমি নানা অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকার উত্তরা ও আশকোনায় তাদের একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে, দক্ষিণখানে রয়েছে বালাখানা। এলাকায় এক নামে তাকে সবাই চেনে। আশকোনায় তাদের সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে ও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন অমি। বিদেশে কর্মী পাঠানোর সূত্র ধরে সাবেক এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে অমির পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। অমির গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সেখানেও অনেক সম্পদ গড়েছেন।