আজিজুল হক সৌরভ (বিশেষ প্রতিনিধি):
স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে ট্রাকের নিচে
মাত্র ২৩ দিন পরেই ছোট চাচার বিয়ে। তাই
বিয়ের কেনাকাটায় শপিংমলে গেলেন
তানজিলা (২৫)। সাথে নিয়ে গেলেন স্বামী এবং
একমাত্র সন্তানকেও। মার্কেট ঘুরে ঘুরে
কিনলেন নিজ পছন্দের জিনিসগুলো। দীর্ঘ
কেনাকাটা শেষে স্বামীর মোটরসাইকেলেই
ফিরছেন বাসায়। কিন্তু কে জানতে এ যাত্রাই
যে তানজিলার শেষ যাত্রা। একমাত্র সন্তান
আর স্বামীকেই রেখেন চলে গেলেন না
ফেরার দেশে।
শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে
নগরীর অলংকার সিডিএ মার্কেট এলাকায়
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তানজিলার। একই ঘটনা
আহত হন স্বামী নুরুজ্জামান শিবলু ও আড়াই
বছরের সন্তান মাহিরাও। বছর চারেক আগে তানজিলা
ও শিবলুর বিয়ে হয়। তাদের ঘরে একমাত্র সন্তান মাহিরা।
শিবলু নগরীর আন্দরকিল্লাহ এলাকায় একটি
প্রেসে কর্মরত। তাদের বাসা নগরীর ১২ নং
সরাইপাড়া পাহাড়তলী লাকী হোটেল
এলাকায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানায়,
মোটরসাইকেলযোগে স্ত্রী তানজিলা ও
সন্তানকে নিয়ে পাহাড়তলীর নিজ বাসায়
ফিরছিলেন নুরুজ্জামান শিবলু। সড়কে প্রচন্ড
জ্যাম থাকায় সড়কের পাশ ঘেঁষেই গাড়ি
চালাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সড়কের ধুলা-বালি
থাকায় মোটরসাইকেল স্লিপ কেটে স্ত্রী-
সন্তানকে নিয়ে পড়ে যান। এরমধ্যে পেছনে
থাকা একটি ট্রাক স্ত্রী তানজিলার মাথায়
উপরে ওঠে পড়ে। পরে স্থানীয়রা তাদের
উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক)
হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল
হক ভূঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে
বলেন, ‘গুরুতর আহত অবস্থায় তানজিলাকে
নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে
মৃত ঘোষণা করেন। শিশু মাহিরার হাতে ও
শরীরের কিছু অংশে আঘাত রয়েছে। তবে
স্বামী তাদের চেয়ে কিছুটা সুস্থ রয়েছে’।
এদিকে রাতে চমেক হাসপাতালের জরুরি
বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী হারিয়ে
হাসপাতালের এক কোণে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে
আছেন স্বামী শিবলু। পাশেই এক আত্মীয়
সান্তনা দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু কারও সাথেই
কথা বলছেন না তিনি। অন্যদিকে নিহত
তানজিলার পিতাও দুর্ঘটনার কথা শুনে ছুটে
আসেন হাসপাতালে। কিন্তু জামাইকে
বাকরুদ্ধ দেখে বারবার মেয়ের কথাই যেন
জানতে চাইছেন তিনি। তখনও তিনি জানতেন
না একমাত্র মেয়ে আর নেই।
তানজিলা তিনভাইয়ের একমাত্র বোন। তার
বাবার বাড়ি সিটিগেট এলাকার পাক্কার
মাথায়।