স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ শুরুর আগে সংস্কার কাজের জন্য আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ হল কালুরঘাট সেতু।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর এ সেতুর দুই প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড বসিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নদীর ওই অংশ পারাপারের জন্য আপাতত ফেরির ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বলেন, “কালুরঘাট সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে বিকল্প হিসেবে ফেরিতে অথবা শাহ আমানত সেতু ব্যবহার করতে হবে।“
এ বিষয়ে সেতুর দুই পারে একটি বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, মেরামত কাজের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সেতুতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
সংস্কার কাজের জন্য সেতু যে বন্ধ রাখা হবে, সে ঘোষণা এসেছিল আগেই। সেজন্য গত ২০ অগাস্ট থেকে ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়। তৈরি করা হয় দুই পাড়ের সংযোগ সড়ক। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেরির টোলও নির্ধারণ করে দেয়।
সওজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, দুটি ফেরি উভমুখী চলাচল করবে এবং একটি ফেরি ‘স্ট্যান্ডবাই’ থাকবে। ফেরিতে যানবাহন পারাপারে আকার ভেদে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা থেকে ৫৬৫ টাকা।
সওজ জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ৫৬৫ টাকা টোল দিতে হবে ট্রেইলার পারাপারের জন্য। বড় ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে ৪৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২২৫ টাকা, মিনি ট্রাকে ১৭০ টাকা দিতে হবে।
বড় বাস পারাপারে ২০৫ টাকা; মিনি বাস ও কোস্টারে ১১৫ টাকা; মাইক্রোবাস, পিকাপ, জিপ ৯০ টাকা; কার ৫৫টাকা; ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ১৩৫টাকা; তিন চাকার অটোরিকশা ২৫টাকা; মোটর সাইকেল ১০ টাকা এবং রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল ৫টাকা দিতে হবে।
চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের মাধ্যম এই কালুরঘাট সেতু। সড়ক পথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এ সেতু দিয়ে ট্রেনও চলে। চট্টগ্রাম থেকে যখন কক্সবাজারে ট্রেন যাবে, এই কালুরঘাট সেতু দিয়েই কর্ণফুলী পার হতে হবে।
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালুর আশা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজারে রেলস্টেশন নির্মাণসহ প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
কিন্তু প্রায় শতবর্ষী এ সেতু ছিল রেল চালুর ক্ষেত্রে মাথাব্যথার বড় কারণ। সেজন্যই সেতুটি সংষ্কারের উদ্যোগ নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতু সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি রুটে চলাচল করত দুই জোড়া ট্রেন। দোহাজারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস ওয়েল আনা-নেওয়ার জন্যও এই সেতু দিয়ে ট্রেন চলত।
১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা।