এম.এইচ মুরাদঃ
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও কাশেম নুর ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি ও দানবীর মরহুম হাসান মাহমুদ চৌধুরীর চেহলাম উপলক্ষে দোয়া মাহফিল, মোনাজাত ও তবরুক বিতরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে আজ শুক্রবার ০২ অক্টোবর’২০ বাদ জুমা তাঁর চেহলাম উপলক্ষ্যে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতি এবং মসজিদ কমিটির ব্যবস্থাপনায় মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে এই দোয়া মাহফিল, মোনাজাত ও তবরুক বিতরণের আয়োজন করা হয়। উক্ত দোয়া মাহফিলে কল্যাণ সমিতি ও মসজিদ কমপ্লেক্সের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মুসল্লী, তাঁর ছাত্র জীবন, ব্যবসায়িক জীবনের বন্ধু-বান্ধব নিজ গ্রাম রাউজনের কদলপুর এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য গুণাগ্রহী শরীক হয়েছেন। দোয়া মাহফিল ও মোনাজাতের পরে উপস্থিত মুসল্লী এবং দুস্থদের মাঝে তবারুক বিতরণ করা হয়।
দোয়া মাহফিলের আলোচনার শুরুতে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব এড. জিয়াউদ্দিন আহাম্মদ মরহুম আলহাজ্ব হাসান মাহমুদ চৌধুরীর জীবনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। আলোচনান্তে তিনি মরহুম হাসান মাহমুদ চৌধুরী চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা এবং চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ ও কবরস্থানের সৌন্দর্য বর্ধনে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অপরিসীম বলে উল্লেখ করেন। করোনার শুরুতে তিনি যারা গৃতে অবরুদ্ধ ছিলেন এবং আয়-রোজগারে কষ্ট পাচ্ছিলেন তাদের জন্য ব্যাপক হারে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন। তাঁর এই দানের প্রতিদান আমরা কখনো দিতে পারবো না। তাঁর এই ভালো কাজ গুলোর বিনিময়ে মহান আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাত নসিব করেন আমরা তার জন্য মন খুলে প্রতি মুহূর্তে দোয়া করি। আমাদের সবার একটি কামনা তাঁর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে এইজন্য মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের সকলের পক্ষ থেকে ফরিয়াদ করছি। আমিন।’
মাহফিলের এক পর্যায়ে মরহুম হাসান মাহমুদ চৌধুরীর বড় ভাই সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সবার কাছে মরহুম আলহাজ্ব হাসান মাহমুদের এবং তার পরিবারের জন্য দোয়া কামনা করেন।
উক্ত দোয়া মাহফিলের আলোচনায় মরহুম হাসান মাহমুদ চৌধুরীর বড় ছেলে জুবায়ের হাসান চৌধুরী সবার উদ্দেশ্যে একটি ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ করেন। যা ছিলো-
‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহ মাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। আমি জুবায়ের হাসান চৌধুরী হাসান মাহমুদ চৌধুরীর বড় ছেলে। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রিয় চট্টগ্রামবাসীর কাছে এই বার্তা প্রেরণ করছি। বিশেষ করে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকাবাসী আমার সালাম নিবেন। খুব ইচ্ছা ছিল আপনাদের সামনাসামনি বসে এই বার্তা পাঠ করবো। তবে কোভিড-১৯ এর কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আপনারা জানেন গত ২৮ সেপ্টেম্বর আমার বাবা অনেকের প্রাণ প্রিয় নেতা, অভিভাবক, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সম্মানিত সভাপতি আলহাজ্ব হাসান মাহমুদ চৌধুরী আমাদের কাঁদিয়ে মহান রব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই আল্লাহর সিদ্ধান্ত এটাই আল্লাহর ফয়সালা এবং আমাদের তা মানিয়ে নিতে হবে। আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি উনাকে চট্টগ্রামে ফিরিয়ে না আনতে পারার কারণে। আপনারা সকলের আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাদের পরিবারের সকলের জন্য দোয়া করবেন। আমি জানি চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সকল মানুষ আমার বাবার জন্য অনেক দোয়া করেছেন। তিনি যখন অসুস্থ ছিলেন তাঁর খবরাখবর নিয়েছেন এবং সত্যিকার অর্থে আমাদের পুরো ঋণী করে দিয়েছেন। এই ঋণ আমরা কখনো শোধ করতে পারবো না। সকলের কাছে অনুরোধ আমার বাবার রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করবেন। আমি আরেকটা কথা বলে শেষ করবো। আপনারা জানেন মানব কল্যাণের জন্য আমাদের একটি ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন আছে কাশেম-নুর ফাউন্ডেশন। আমার বাবার অবর্তমানেও এই ফাউন্ডেশন কাজ করে যাবে এবং যে সব কল্যাণমূলক কাজ তিনি করে যেতেন তা অব্যাহত থাকবে। সুতরাং আপনাদের কারো কোন প্রয়োজনীয়তায় আপনারা কাশেম-নুর ফাউন্ডেশনকে পাশে পাবেন। ধন্যবাদ।’
আলোচনায় সভায় রাউজান কদলপুরের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুদ্দীন চৌধুরী লাভলু মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
উল্লেখ্য, মরহুম হাসান মাহমুদ চৌধুরী গত ২৮ সেপ্টেম্বর’২০ করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় মাইন স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর ইচ্ছাতেই তাকে ঢাকার মিরপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর দাফন চট্টগ্রামে করা হলে হাজার হাজার মানুষ তাঁকে দেখতে আসবে এবং দেখতে এসে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। সেই কথা ভেবেই তিনি মৃত্যুর পূর্বে ঢাকায় তাঁর দাফনের সিদ্ধান্ত পরিবারের কাছে ব্যক্ত করেন।’