এম.এইচ মুরাদঃ
প্রদীপকাণ্ডের পর কক্সবাজার পুলিশের বদলির ঢেউ পড়ছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশেও। কক্সবাজারে এসপি, ৮ থানার ওসি সহ সব সাব ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবলসহ পুরো ইউনিটকে সেখান থেকে সরিয়ে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়। সেখানে অন্য রেঞ্জ থেকে চৌকস সৎ ও দক্ষ অফিসারদের পদায়ন করা হয়েছে। সেই বদলির ঢেউ এসে এবার সিএমপিতেও আসছে বড় ধরনের রদবদল।
এই রদবদল হবে দুই প্রক্রিয়ায়। একটি সরাসরি পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে অন্যটি সিএমপি কমিশনারের নিজস্ব তদন্তের পর বদলি। সিএমপি কমিশনার ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ‘আরও’ পদে, এসআই বদলি, দুই থানার ওসি বদলি ও পদায়ন করে সেই বার্তা দিয়েছেন। তা চলমান থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দু-একদিনের মধ্যে সিএমপিতে ওসিসহ পরিদর্শক, সাব ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল পদে ব্যাপক বদলি হবার কথা রয়েছে৷ পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে সিএমপির ৬শ কনস্টেবল ও ৭৫ জন সাব ইন্সপেক্টরের বদলি হবে শিগগিরই। এদের সিএমপি নয় শুধু চট্টগ্রাম বিভাগে বা রেঞ্জেও পোস্টিং করা হবে না। এছাড়া ওসি থেকে ডিসি লেভেল পর্যন্ত অনন্ত ৩০ জনের নামও এই বদলি তালিকায় রয়েছে৷ একই ধরনের তালিকা করেছেন সিএমপি কমিশনারও। এই তালিকায় সিএমপির অনেক প্রভাবশালী ওসির নামও আছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সিএমপিতে যেসব বিতর্কিত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে একই থানায়, ফাঁড়ি বা দপ্তরে কর্মরত আছেন তাদের তালিকা করেছেন। ইতিমধ্যে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সরিয়ে সৎ ও দক্ষ অফিসার পদায়ন শুরু হয়েছে।
ফলে দীর্ঘদিন ধরে এক থানায়, ফাঁড়ি বা ইউনিটে কর্মরত বিতর্কিত অফিসারদের মধ্যে এখন চলছে ‘বদলি আতঙ্ক’। নতুন আইজিপি বেনজির আহমেদ পুলিশে যে সংস্কার শুরু করেছেন তার পালে হাওয়া লেগেছে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে যাওয়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রদীপ-লিয়াকতের ভূমিকা। এটাকে সামনে নিয়েই মূলত পুলিশে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর জনসাধরণের মনে পুলিশ নিয়ে যে ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেই সংকট থেকে উত্তরণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের কড়া বার্তা দিতেই এই ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু হয়েছে। এছাড়া দক্ষ ও যোগ্য অফিসারদের পদায়ন করে কাজে গতিশীলতা আনা ও এ কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য একটি উদ্দেশ্য।
গত ৭ সেপ্টেম্বর সিএমপির ৩০তম পুলিশ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব নেন সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে তার অবস্থান সম্পর্কে বার্তা দিয়েছেন ।
বিতর্কিত ও অযোগ্যদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তালিকা বানানোর কাজ শুরু করেন। তালিকা তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিটে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ আছে তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যদিকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাদের বিষয়েও।
সিএমপি সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরই সিএমপির রিজার্ভ অফিসের আরআই শফিকুল ইসলামকে বদলি করেন কমিশনার। এস আই শফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন এসআই বদিউল। গত সপ্তাহে ৫৯ জন সাব-ইন্সপেক্টরকে বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করেছেন সিএমপি কমিশনার। এরপর আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানকে সরিয়ে ডবলমুরিং থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেনকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমানকে নগর পুলিশের ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের পরিদর্শক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
চান্দগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামানকে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। অন্যদিকে কাউন্টার টেররিজমের বোমা নিস্ক্রিয়করণ ইউনিটের প্রধান পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়াকে করা হয়েছে চান্দগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)।
জহির এবং রাজেস সিএমপিতে দক্ষ অফিসার হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তে তাদের রয়েছে সাফল্য। এদের পদায়নে একমাত্র যোগ্যতা ও অতীত রেকর্ডই মানদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে। এখানে কোনও তদবির বা অনৈতিক লেনদন হয়নি বলে একাত্তর বাংলা নিউজকে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।
এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে নব নিযুক্ত কমিশনারের মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন থানায় অর্থের বিনিময়ে ওসি পদায়নের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কমিশনার তানভীর বলেছিলেন, ‘আমার কাজ দেখুন, তারপর মতামত দেবেন, কাজ দেখে তারপর আমাকে মূল্যায়ন করুন।’
এ প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, যোগ্য লোকদেরই পদায়ন করা হচ্ছেে বা হবে। একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ। ভালো কাজ করলে পুরস্কার আর খারাপ করলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। পোস্টিংও পুরস্কারের অংশ।