স্টাফ রিপোর্টারঃ
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন ‘জিয়ার কবরে তার লাশ নেই। এটা নিয়ে এত নাটক কেন বিএনপি`র?’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গত কিছুদিন ধরেই জাতীয় সংসদ ভবনকে লুই কানের নকশা আদলে পুরোপুরিভাবে বিন্যস্ত করার কথা বলা হচ্ছে এবং লুই কানের মূল নকশাও নিয়ে আসা হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই নকশা এবং বর্তমান জাতীয় সংসদের বাস্তব অবকাঠামো চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা গেছে যে, লুই কানের নকশা`র কোথাও জিয়ার সমাধিস্থলের মত অবকাঠামো নির্মাণের কোনো কিছুই ছিল না। আর এ কারণেই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থল সেখান থেকে উঠিয়ে নেয়ার সুপারিশ করেছে। কিন্তু গত দেড় বছরে করোনার কারণে সরকার এ দিকে মনোযোগ দিতে পারেনি।
তবে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর এই নীতিনির্ধারণী বক্তব্যের পর পরিষ্কার হয়ে গেছে যে জিয়াউর রহমানের কবর এখন আর সংসদ ভবন এলাকায় থাকছে না। এটি তাকে প্রথম তার মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার জিয়ানগর এলাকায় যেখানে দাফন করা হয়েছিল সেখানেই ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জিয়াউর রহমানের লাশ এই তথাকথিত সমাধিস্থলের নেই এবং যেটি প্রধানমন্ত্রী গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮১ সালের ৩০ মে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। নিহত হবার পর চট্টগ্রামেই তার লাশ সমাধিস্থ করা হয়। এরপর বিদ্রোহীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং এক রহস্যজনকভাবে তথাকথিত বিদ্রোহের হোতা বলে ঘোষিত মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। এরপর জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে আসা হয় ঢাকায় এবং সংসদ ভবন চত্বরে তাকে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে বিএনপির এই এই কবরকে ঘিরে অবকাঠামো নির্মাণ করে যা লুই কানের নকশার পরিপন্থী। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় বলে আসছে যে এটি সংসদের সৌন্দর্য এবং মর্যাদাকে নষ্ট করেছে। এছাড়াও সংসদ ভবন এলাকায় আরও কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তির কবর রয়েছে। এই কবরগুলো এখানে থাকার কথা নয় বলেই মনে করছে সরকার।
ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কাজ শুরু করা হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি সুপারিশ ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে প্রদান করেছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুরের এক অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের কবর যেহেতু সংসদ ভবন এলাকায় নেই তা এখান থেকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এখানে দুটি কারণ দেখাচ্ছে সরকার। প্রথমত, লুই কানের এই নকশাটি বিশ্বের সেরা স্থাপত্য নকশার অন্যতম। কাজেই এই নকশার কোনো ব্যত্যয় হোক এটি সরকার চায় না দ্বিতীয়ত, যেখানে জিয়াউর রহমানের কবর বলে বিএনপি নেতারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ বা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে সেখানে আসলে জিয়াউর রহমানের কোনো কবরই নেই। আর এই সমস্ত বাস্তবতার কারণেই সরকার এখন জিয়াউর রহমানের এই কবরস্থানটি গুটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিচ্ছে এবং যেখানে জিয়াউর রহমানকে প্রথম সমাধিস্থ করা হয়েছিল সেটিকেই কবর বলে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।