স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে তাদের ‘একযোগে’ সংগঠন গোছাতে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার গণভবনে দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা দলীয় সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন।
এসময় দলের সাংগঠনিক বিষয়, নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে, সংগঠন গোছাতে এবং নির্বাচন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনাও দেন তিনি বলে জানান বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা।
নগর আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের নেতাদের সঙ্গে ‘মনখুলে’ আলাপ করেছেন দলীয় সভানেত্রী বলে জানান নগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম।
নগর আওয়ামী লীগের নেতারা দুই ভাগে গণভবনে যান। পরে তারা দলীয় সভাপতির সঙ্গে একত্রে বৈঠক করেন।
একপক্ষে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ও নির্বাহী কমিটির সদস্যরা সহ মোট ১২ জন।
তাদের সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা সফর আলী, সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, স্বাস্থ্য সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এ জাফর, নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, বিজয় কিষাণ চৌধুরী, আবদুল লতিফ টিপু ও বেলাল আহমদ।
আরেক পক্ষে ছিলেন নগর কমিটির সহ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, জহিরুল আলম দোভাষ ও আলতাফ হোসেন বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বদিউল আলম এবং কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এই সাতজন।
কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বলেন, “সংগঠন নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে অনেক সময় ধরে। ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি শেষ করে নগর কমিটির সম্মেলন হবে। তৃণমূলের সম্মেলনগুলো রমজানের মধ্যে শেষ করতে বলেছেন নেত্রী।
“অনেক কথাই হয়েছে। সবাই মন খুলে কথা বলেছেন। তিনি সবার খোঁজ নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনের জন্য মাঠে থেকে দল গোছাতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
নগর কমিটির অধীন ১৩২টা ইউনিটের মধ্যে ১২০টির সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। ৪৪টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে ৩টা ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়েছে।
এরপর গত ৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রের নির্দেশে তৃণমূলের সম্মেলন স্থগিত করার কথা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে দীর্ঘ দিন ধরে দুটি ধারা চলছে। এর একটি অংশ নগর কমিটির সভাপতি ও তিনবারের মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর ওই ধারাটির নেতাকর্মীরা আছেন তার বড় ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে।
আরেকটি ধারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
তৃণমূলের এসব কমিটির শেষ সম্মেলন হয়েছিল দেড় থেকে দুই দশক আগে। আর কেন্দ্র থেকে নগর আওয়ামী লীগের সব শেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর।
মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর। তবে সেবার সম্মেলন হয়নি, কমিটিরি ঘোষণা এসেছিল ঢাকা থেকে। তার আগে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে।
২০১৭ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পর কমিটির সহ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী পান ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব। কিন্তু সম্মেলন আর হয়নি।
এরপর চলতি বছর ১ অক্টোবর, ৪ ডিসেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর তিন দফায় নগর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করলেও তা হয়নি।