আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফ্রান্স বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, বিধিনিষেধ থাকলেও তারা ২ জুন থেকে দেশব্যাপী দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বার, রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে ফের খুলে দিচ্ছে। তারা গ্রীস্মকালীন ছুটির সময়ে অভ্যন্তরিণ ভ্রমণের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। খবর এএফপি’র।
প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড ফিলিপ বলেন, রাজধানী প্যারিসে কেবলমাত্র বিভিন্ন ভবনের বাইরে থাকা খাবার ও পানীয় দোকানগুলো গ্রাহকদের জন্য খুলে দেয়া যেতে পারে। ফ্রান্সের অন্য যেকোন এলাকার চেয়ে রাজধানীতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে অনেক বেশি।
ফ্রান্সে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কঠোর লকডাউন পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ধাপের বিস্তারিত ঘোষণা দিয়ে তিনি আরো বলেন, জনগণকে তাদের বাড়ির ১শ’ কিলোমিটারের মধ্যে আর বেশি দিন সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘ব্যতিক্রম ছাড়া এই স্বাধীনতা হবে বিধিনিষেধের মধ্যে।’
তিনি আরো বলেন, ‘লকডাউন পরবর্তী প্রথম দুই সপ্তাহ পর আমরা যেমনটা আশা করেছিলাম দেশ তার চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে।’
পরবর্তী ধাপ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদের শীর্ষ সদস্যদের সাথে এক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফের খুলে দেয়া শুরু করা হবে।
দুই মাসের লকডাউনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফ্রান্সের বিখ্যাত জাদুঘর ও স্মৃতিসৌধ আগামী ২ জুন থেকে দর্শণার্থীদের জন্য খুলে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
ক্যাম্পিং সাইট এবং অবকাশ কেন্দ্রগুলো ২২ জুন থেকে খুলে দেয়া হবে। এদিকে আগামী সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন পার্ক, গার্ডেন, সমুদ্র সৈকত এবং লেক খুলে দেয়া হবে।
সরকার লকডাউন আরোপ করায় হাজার হাজার লোকের জীবন রক্ষা পেয়েছে। এতে সরকারের প্রশংসা করা হচ্ছে। ফ্রান্সে ১৭ মার্চ থেকে ১১ মে পর্যন্ত এ লকডাউন বলবৎ ছিল।
তবে, এই লকডাউনের কারণে ফ্রান্সকে কঠিন অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে হয়। ফিলিপ এটাকে একটি ‘ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক মন্দা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ মন্দার কারণে এপ্রিলে আরো প্রায় ১০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে বলে দাবি করা হয়।
করোনা ভাইরাস হুমকির হালনাগাদ মানচিত্র প্রকাশ করে ফিলিপ বলেন, কেবলমাত্র প্যারিসের বৃহত্তর ইলি-ডি-ফ্রান্স অঞ্চল এবং গুইয়ানা ও মেয়োটের বাইরের ভূখন্ড উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ‘অরেঞ্জ’ ধাপের এবং দেশের বাকি অংশে ‘গ্রীন’ ধাপের সতর্কতা বজায় রয়েছে।
প্রধাণমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ফ্রান্সের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো ভাইরাস ছড়িযে পরার ঝুঁকি রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি সামাজিক দূরত্বের পদক্ষেপ পালন করতে এবং হাত ধোয়ার প্রচলিত নিয়ম কঠোরভাবে বজায় রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
জনসমাবেশ স্থলে ১০ জনের বেশি লোকের একত্রিত হওয়া ২১ জুন পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকবে এবং গণ পরিবহনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৫০০ বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। এদিকে কয়েকশ’ লোক আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছে। যদিও এখন চিকিৎসা নেয়া এ সংখ্যা দেশটিতে মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পিক টাইমের এক-তৃতীয়াংশেরও কম।
ফিলিপ বলেন, আগামী ২২ জুন থেকে সিনেমা হল এবং পরবর্তী মঙ্গলবার থেকে নাট্যশালা ফের খুলে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে।