আন্তর্জাতিক ডেস্ক
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের স্বাস্থ্যসেবা খাত প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেশটির রাজধানী দিল্লির অন্তত ছয়টি হাসপাতালে অক্সিজেনের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৯৯ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, অক্সিজেনের অপেক্ষায় বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বাকি হাসপাতালেও মাত্র কয়েক ঘণ্টা চালানোর মতো অক্সিজেন আছে বলে চিকিৎসকদের ভাষ্য।
দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এবং মারা গেছে ২ হাজার ১০৪ জন।
দিল্লিভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি জানিয়েছে, অন্যান্য রাজ্যের জন্য নির্ধারিত অক্সিজেন বহনকারী ট্যাংকারগুলো দিল্লির রাজ্য কর্তৃপক্ষ আটকে দিচ্ছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন মজুদ করে রেখেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভারতীয় রাজনীতিক সৌরভ ভরদ্বাজ টুইটারে হিন্দিতে লেখা এক বার্তায় অক্সিজেনের জন্য সহায়তা চেয়ে বলেছেন, তিনি যে হাসপাতালে আছেন সেখানে মাত্র তিন ঘণ্টার অক্সিজেন মজুদ আছে।
“অনেক মানুষ অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল এবং অক্সিজেন ছাড়া এই মানুষগুলো ডাঙায় তোলা মাছের মতো মারা যাবে। এখন সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সময়।”
এদিকে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, শেষকৃত্য করার জন্য শ্মশানেও দীর্ঘ প্রতীক্ষায় মৃতের স্বজনেরা।
বিবিসির ভারতীয় সংবাদদাতা যোগিতা লিমায়ে বলেন, ভারতে অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা সম্বলিত শহর হিসেবে দিল্লির সুনাম রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাম্প্রতিক এই ঊর্ধ্বগতি রাজধানীর স্বাস্থ্যসেবা খাতকে নাকাল করে ফেলেছে।
উত্তরপূর্ব দিল্লির একটি শ্মশানের পরিচালক জিতেন্দর সিং সুন্তি রয়টার্সকে বলেন, “মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের সময় আমাদের এখানে দিনে আট থেকে দশ জনের মরদেহের সৎকার করা হতো। এটি একদিন সর্বোচ্চ ১৮ জনে পৌঁছেছিলো। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত রাতে (বৃহস্পতিবার) আমরা ৭৮ জনের মরদেহের সৎকার করেছি।”
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। “রোগীরা চিকিৎসকদের আঘাত করার চেষ্টা করছেন। সব কিছুর জন্য তারা চিকিৎসকদের দোষারোপ করছেন। এমনকী হাসপাতালের প্রশাসনও চিকিৎসকদের দায়ী করছে।”
তবে বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) অক্সিজেনের এ ভয়াবহ সরবরাহ সংকট নিরসনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
একটি সরকারি বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সংকট নিরসনে বিস্তৃত পরিসরে পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কোথায় অক্সিজেন বেশি দরকার তা চিহ্নিত করা হচ্ছে।
দেশজুড়ে অক্সিজেনের সরবরাহ দ্রুততর করতে বিমান পরিসেবা ও সরাসরি ট্রেন পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে সরকারি বার্তায়।