এম.এইচ মুরাদঃ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভিত্তিক টিটিপি চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এরপর কার্যত এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এবার নতুন এক বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিয়ে এ অঞ্চলে ফিরে আসার ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র।
মূলত চীনের নেতৃত্বে গঠিত রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) চুক্তির পাল্টা দিতেই যুক্তরাষ্ট্রের এ উদ্যোগ। কিন্তু বাণিজ্য চুক্তিতে সাধারণত যে বাজার সুবিধা থাকে, এ চুক্তিতে তা থাকবে না। এতে এ চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক সমালোচনার ভয়ে বাইডেন প্রশাসন চুক্তিতে এ বিষয়টি রাখছে না, এমনটাই জানা গেছে।
এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন জাপান সফর করছেন। সেখান থেকেই তিনি ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর প্রসপারিটি (আইপিইএফ)’ শীর্ষক এই চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। মোট ১৩টি দেশ এই চুক্তিতে থাকবে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য, সরবরাহব্যবস্থা, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, অবকাঠামো, কর ও দুর্নীতি দমন—এই বিষয়গুলোকে চুক্তির ভিত্তি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া চুক্তির অন্যান্য পক্ষ হলো দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। বিশ্বের অর্থনীতির ভরকেন্দ্র এখন এশিয়ার দিকে সরে আসছে। আর এ দেশগুলো বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে বলে আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে দাঁড়িয়ে চুক্তি সম্পর্কে জো বাইডেন বলেন, ‘আমরা খুব সহজ এক কারণে এখানে সমবেত হয়েছি, সেটা হলো, ২১ শতকের অর্থনীতির ইতিহাসের বড় এক অংশ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে লিখিত হবে। এই কাঠামো আমাদের সফলতার চূড়ায় নিয়ে যাবে।’
তবে বাইডেন প্রশাসন পরিষ্কারভাবেই বলেছে, এই বাণিজ্য চুক্তির বলে সহযোগী দেশগুলো অন্যান্য চুক্তির মতো আমেরিকার বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে না। অর্থাৎ এই চুক্তির পরিসর সীমিত। সদস্যদেশগুলোর অঙ্গীকার আইন দ্বারা সিদ্ধ হবে না। এ পরিস্থিতিতে অনেক বিশ্লেষক হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মত, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত, আরও বড় পরিসরে সম্পৃক্ত হওয়া। এমনকি এই চুক্তির আওতায় শুল্কও হ্রাস করা হবে না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনা নেতৃত্বাধীন বাণিজ্য জোট এ অঞ্চলের বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে অনেক দূর এগিয়েছে। চীন শুধু লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নিরসনের দাবি করে। কিন্তু তার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অনেক উচ্চাভিলাষী। তারা শ্রমমান উন্নয়ন ও পরিবেশবান্ধব বাণিজ্য নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু তারা নিজেদের বাজার বন্ধ করে রাখলে চলবে না। এসব লক্ষ্য অর্জন করতে চাইলে তাদের আরও মুলা ঝোলাতে হবে।