স্টাফ রিপোর্টার:
বেসরকারি ব্যাংক খাতের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চার বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো-এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩২ হাজার ৯৫৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৫০৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের প্রায় ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে মন্দমানের ঋণই নয় হাজার ৯৪৭ কোটি ৪৮ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে নয় লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি ২২ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা অর্থাৎ ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক, বিডিবিএল, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ; ৪০ বেসরকারি ব্যাংকের ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ৯ বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ শতাংশ এবং ৪ বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১৭ শতাংশ। এরমধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের অবস্থা করুণ। ২০ থেকে ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ এ ব্যাংক চারটির।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে হওয়া পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৩২ কোটি ১২ লাখ টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৭১ দশমিক ৬২ শতাংশ। ব্যাংকটির ৫৪টি শাখার মধ্যে ৫২টিই লোকসানি। সরকারের নগদ অর্থ সহায়তা, নানা প্রণোদনা এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা পরিচালক হওয়ার পরও ব্যাংকটির অবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এক সময়ের আল বারাকা ব্যাংক মালিকানা ও নাম পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আইসিবি ইসলামী ব্যাংক নাম ধারণ করে। ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৭১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে এটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ।
রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এর শাখা থাকলেও এতে ‘ভালো’ কোনো গ্রাহক নেই, এমনকি গ্রাহক আকৃষ্ট করার মতো কোনো কর্মপন্থাও নিচ্ছে না তারা। অবশ্য ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের দাবি এ ব্যাংকে কেউ দুর্নীতি করে না, পরিচালকরাও ব্যাংকের অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করেন না, আগের বোঝার কারণেই এটি দাঁড়াতে পারছে না।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের অবস্থা প্রায় একই। ব্যাংকটি বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৯৬৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ১৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন (সঞ্চিতি) রক্ষার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৪৮৮ কোটি টাকা।
এক সময় ‘ভালো’ ব্যাংক বলে পরিচিত ছিল এবি ব্যাংক। ব্যাংকটির ওপর নিয়ে কয়েক দফা মালিকানা পরিবর্তনের ঝড় বয়ে গেছে। আরেক দফা মালিকানা বদলের বিপদে থেকে রক্ষা পেলেও আগের সেই জৌলুস ফিরে আসেনি। খেলাপি ঋণ ২৪ শতাংশে। পাঁচ হাজার ৮৯৪ কোটি খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটিকে প্রভিশন সংরক্ষণ করার কথা তিন হাজার ৮৬৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা কিন্তু সংরক্ষিত আছে এক হাজার ৩০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।