মোঃ জানে আলম জনি:
সৌদি আরবসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশের মতই যুক্তরাজ্যেও আজ উদযাপিত হচ্ছে ঈদ-উল-ফিতর। যুক্তরাজ্যের ইসলামাবাদ, টিলফোর্ডের মসজিদে মোবারক-এ ঈদের খুৎবায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-ভ্রাতৃত্ব এবং সঠিক চেতনা বোধ জাগ্রত হওয়ার জন্য এবং বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা, সুরক্ষা আর হেদায়েতের জন্য দোয়া করা হয় এবং সবার প্রতি দোয়ার আহ্বান জানানো হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানায় আহমদীয়া মুসলিম জামায়াত।
সেখানে বলা হয়, নিখিল-বিশ্ব আহমদী মুসলিম জামাতের বর্তমান খলীফা হযরত মির্যা মসরূর আহমদ ( আই.) বিশ্ববাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানিয়েছেন খুৎবায়। তিনি রবিবার (২৪ মে) যুক্তরাজ্যে ঈদের খুৎবা প্রদানকালে এ শুভেচ্ছা জানান। থেকে প্রদত্ত ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের প্রকৃত মর্ম কী এবং কারা প্রকৃতপক্ষে ঈদ পালনকারী তা তিনি তুলে ধরেন।
খুতবায় তিনি বলেন, ঈদের অর্থ হল খুশি; আর মানুষ তখন খুশি হয় যখন সে কোন কাজে সফলতা অর্জন করে। যদি কোন সাফল্যই অর্জিত না হয়, তবে কি কোন বোধ-সম্পন্ন মানুষ খুশি হতে পারে?
তিনি বলেন, ঈদ মূলত: তিন প্রকার হয়ে থাকে। প্রথমত: সেসব মানুষ, যারা আল্লাহ্ তা’লার সাথে মিলিত হবার উদ্দেশ্যে ও আল্লাহ্ তা’লাকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে নিষ্ঠার সাথে যাবতীয় ইবাদত পালন করেন এবং সৃষ্টজীবদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন, ব্যক্তিগত স্বার্থে বা লোক-দেখানোর উদ্দেশ্যে এসব করেন না; তারা সাধারণ মানুষের মাঝেই চলাফেরা করেন, কিন্তু তাদের মন সর্বদা আল্লাহ্র স্মরণে রত থাকে; এমন ব্যক্তিরা খোদাকে লাভ করেন এবং এদের জন্যই প্রকৃত ঈদ।
দ্বিতীয় প্রকার ঈদ হল সেসব লোকের, যারা সাধ্যমত সুস্বাদু ও উপায়েদ খাবারও খায়, নতুন পোশাক পরে, সুগন্ধি লাগিয়ে নামাযে যায়, উপহার আদান-প্রদান করে- মোটকথা প্রথাগতভাবে ঈদ পালন করে এবং এই ভেবে আনন্দিত হয় যে তারা ঈদ লাভ করেছে; কিন্তু প্রকৃত ঈদ তাদের থেকে যোজন যোজন দূরে থেকে যায়। তাদের উপমা সেই শিশুর মত যে বিষধর চকচকে সাপ দেখে সেটিকে খেলনা ভেবে আনন্দে তা জাপটে ধরে, কিন্তু সে জানেও না যে নিমেষেই তার সব আনন্দ বিষাদে পরিণত হবে এবং সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। এমন মূর্খতারই শিকার সেসব লোক, যারা খোদা তা’লাকে ভুলে বাহ্যিক ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে। এদের ঈদ মোটেও প্রকৃত ঈদ গণ্য হতে পারে না।
তৃতীয় প্রকার ঈদ হল- যারা জানে যে তারা পাপী, তারা রোযা তো রেখেছে কিন্তু মনে মনে লজ্জিত যে যথাযথভাবে রোযা রাখতে পারে নি, নামায পড়েছে কিন্তু মনে মনে জানে- আল্লাহ্ তা’লার নির্দেশিত উপায়ে নামায পড়া হয় নি, ঈদের রীতি অনুসারে সুন্দর জামা-কাপড় পড়ে নামায পড়তে যায়, সুস্বাদু খাবার-দাবার খায়, কিন্তু মনে মনে দুঃখিত হয় ও অন্যদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে পরিতাপে কাঁদে- ‘হায়, যদি আমার পোশাকের মতই আমার মনও শুভ্র হতো!’ ঈদ পালনকারী ভাইদের দিকে তাকিয়ে ও নিজের ভেতরের অবস্থা ভেবে অনুশোচনায় মন ভরে যায় ও লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। সবার মাঝে থেকেও তাদের মন তাদের পাপের কারণে লজ্জিত ও অনুতপ্ত থাকে, সারাক্ষণ বিবেকের দংশনে কষ্ট পেতে থাকে। কিন্তু সেইসাথে এ-ও ভাবে ‘আল্লাহ্ তা’লা তো সাত্তার, মানুষের দোষ-ত্রুটি, দুর্বলতা গোপন রাখেন; আমার এই বাহ্যিক ঈদ পালনকে হয়তো তিনি একান্ত দয়াপরবশ হয়ে আত্মিক ঈদে পরিণত করবেন, যেভাবে আমার বাহ্যিক অবস্থা তিনি ঢেকে রেখেছেন, হয়তো আমার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও গোপন রাখবেন!’ আল্লাহ্ তা’লা, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি পরম দয়াময়, অতীব ক্ষমাশীল, তিনি তাঁর বান্দাকে নিরাশ করেন না। বান্দা যখন লজ্জা, অনুতাপ ও অনুশোচনায় বিচলিত হয়, তখন তা তার মাঝে তওবার অবস্থা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহ্ তা’লা এমন বান্দার প্রতি কৃপা করে তার কাছে আসেন।
তাই আমাদের এই চেষ্টা করা উচিত যেন দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি, নিদেনপক্ষে তৃতীয় দলে যেন ঠাঁই পাই। উপরন্তু এই চেষ্টা করা উচিত যে দ্বিতীয় প্রকার ঈদ পালনকারীদেরকেও যেন সঠিক ও প্রকৃত ঈদের সন্ধান দিতে পারি, যা আমরা মহানবী (সা.)-এর নিবেদিতপ্রাণ দাসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, যেন পৃথিবী থেকে ভ্রষ্টতার মেঘ কেটে গিয়ে হেদায়েতের জ্যোতিতে পৃথিবী উদ্ভাসিত হয়। কেবলমাত্র তখনই আমাদের ঈদ প্রকৃত ঈদ হবে।
শেষে তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-ভ্রাতৃত্ব এবং সঠিক চেতনাবোধ জাগ্রত হওয়ার জন্য এবং বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা, সুরক্ষা আর হেদায়েতের জন্য দোয়া করেন এবং সবার প্রতি দোয়ার আহ্বান জানান। সেই সাথে বিশ্ববাসীকোড় তিনি ঈদের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানান।