অভিষেক ঘোষ দস্তিদারঃ
অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও গণপরিবহনে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মকানুন। দাঁড়িয়েও নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের। ভাড়া নিয়ে প্রায় সময়ই ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ছেন যাত্রী-হেলপার। এমনকি গাড়ি থামিয়ে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। ‘কঠোর বিধি-নিষেধের’ মধ্যে এমনই চিত্র নগরীর গণপরিবহনে।
সোমবার (২১ জুন) দুপুর দুইটায় দেখা গেল নগরীর মুরাদপুর মোড় থেকে বহদ্দারহাট হাট যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাইফুল ইসলাম বাসে নির্দিষ্ট সিটের বাইরে দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার কারণ জানতে চান হেলপারের কাছে। হেলপার কোনো সদুত্তর না দিয়ে খারাপ মন্তব্য করে। এছাড়াও ভাড়াও নেয় ১০ টাকা যেখানে আগের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। সাইফুল বলেন, “বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। কষ্ট হলেও দিচ্ছি কিন্তু সেখানে সিটের অতিরিক্ত যাত্রী। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়েও যাচ্ছেন যাত্রীরা। অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া ও দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাসের হেলপার গাড়ি থামিয়ে মুহাম্মদপুর নামিয়ে দেয়।”
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর ফতেয়াবাদ স্কুলের সামনে থেকে ৩ নম্বর বাস ছেড়ে এসেছে মুরাদপুরে। নির্দিষ্ট আসনের বিপরীতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে তারা, ভাড়াও নিচ্ছে বেশি। প্রতি যাত্রী থেকে ১৫-১৮ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হয়। অথচ আগে ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এছাড়াও বাসে ওঠা-নামা ১০ টাকা করে নিচ্ছে তারা। যাত্রীদের অভিযোগ, ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ নানান শর্ত থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। যাত্রী, চালক, শ্রমিক সবাই বেমালুম ভুলে গেছে স্বাস্থ্যবিধির কথা। প্রায় গাড়িতেই চালক ও হেলপারদের মুখে মাস্ক থাকে না। পুলিশ দেখলেই মাস্ক লাগায়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত এপ্রিলে গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এরপর শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, গাড়ির অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। বিপরীতে ৬০ শতাংশ করে ভাড়া বেশি নেওয়া যাবে। কিন্তু বিভিন্ন গণপরিবহনে একদিকে গাড়িভর্তি যাত্রী নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি।
নগরীর ৩ নম্বর রুটের বাস চালক আব্দুল জাব্বার একাত্তর বাংলা নিউজকে বলেন, অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আমাদের পোষায় না। অনেকাংশে আমরা অতিরিক্ত যাত্রী ওঠাতে না চাইলেও তারা উঠে যান। যার কারণে আমরা উঠাই। ভাড়া দ্বিগুণ নিচ্ছি। অনেক যাত্রীর সঙ্গে আমাদের ঝগড়াও হচ্ছে।
নগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শ্যামল কুমার নাথ একাত্তর বাংলা নিউজকে বলেন, যাত্রীদের অভিযোগ পাওয়া মাত্রই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। ওঠা-নামায় ১০ টাকার বিষয়টি আমরা দেখছি। বেশিরভাগ গাড়িচালক সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত মানছেন, কিন্তু অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত মানছেন না। এ বিষয়ে বিভিন্ন গাড়িতে মামলা দিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। সব গাড়িতে তো আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না।
লকডাউনের শুরু থেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নগরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও এখন তা অনেকাংশেই কমে এসেছে। বেড়েছে গণপরিবহনের চাপও।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, “জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৬টি টিম নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। গণপরিবহন বেড়ে যাওয়ায় সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তারপরও আমরা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।”