এম.এইচ মুরাদ:
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দেয়াং পাহাড়ের ভেতরে সবুজে ঘেরা মরিয়ম আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে শিল্পাঞ্চলখ্যাত নতুন উপজেলা কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুরে খৃষ্টানদের মিশনারি ক্যাথলিক দ্বারা পরিচালিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ঐতিহাসিক পরিচিতি। দেয়াং পাহাড়ের আশ্রমের পাশে ১৯৪৬ সালে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন কানাডানিবাসী প্রয়াত ব্রাদার ফ্লেভিয়ান লাপ্লান্ত সিএসসি প্রায় ৮৪ একর জায়গায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।
চট্টগ্রামের কর্ণফূলী উপজেলায় ৭৪ বছর আগে বিদেশি এক ধর্ম যাজক ব্রাদার লিপেন্তে ২শ অনাথ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে মরিয়ম আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি পরপর দুইবার ২০১৭ ও ’১৮ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার সেরা স্কুল নির্বাচিত হয়েছে। ব্রাদার ফ্লেভিয়ান ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট অনাথ শিশুদের নিয়ে প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরে১৯৬৬ সালের জুনে মাসে ধারাবাহিক চেষ্টায় স্কুলটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রুপ নেয় । মাতা মেরীর নাম পরে মরিয়ম আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে মাধ্যমিকের যাত্রা শুরু করেন।
প্রথমে ১০ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
১৯৮০ সালের পহেলা জানুয়ারি এমপিওভুক্ত হয়। চারদিকে পাহাড়,মাঝে স্কুল ক্যাম্পাস। পূর্বে ছাত্রনিবাস। পুরনো স্কুলভবনটি মেয়ে, ছেলেদের নিয়ে আসা অভিভাবকদের বসার স্থান। ১৫শ ৪ জন লেখাপড়া করে। ১১শ ৪০ জন মুসলিম, ১৮৬ জন হিন্দু, ১৫০ জন খ্রিস্টান, বাকি ২৮ জন বৌদ্ধ। শিক্ষক-শিক্ষিকা ৩৮ জন, ১৮ জন নারী। একজন ফাদার, চারজন ব্রাদার ও একজন সিস্টারও আছেন।
এই বিদ্যালয়ের পড়ার মান, পরিবেশ, শান্তি, নীতিবোধ, শৃঙ্খলার চর্চা পুরো জেলায় বিখ্যাত। একেবারে গরিব, পিছিয়ে পড়াদের ভর্তি হতে উৎসাহ দেন শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক ব্রাদার মন্ত্রজয় স্টিফেন ত্রিপুরা বলেন, ছাত্রছাত্রীদের সহায়ক হিসাবে কাজে শিক্ষকদের নিয়মিত তদারকি আছে, তারা নিয়ম মেনে পড়ান, ছাত্র-শিক্ষকের জবাবদিহি আছে, বিশেষ কারণে অনুপস্থিতদের ‘বাড়তি ক্লাস’, ‘কাউন্সিলিং’ করানো হয়, অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ হয়। সব কছু মিলিয়ে এই প্রতিষ্ঠান একটু ব্যাতিক্রমী।
মিশনারিরা প্রতিষ্ঠা করলেও এ বিদ্যালয়ের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে আসছে বিভিন্ন ধর্মবর্ণের শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে সুশিক্ষিত করে তুলছে। শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের অদম্য মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তোলা মনোরম পরিবেশে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর পাঠ দান চলে বিদ্যালয়টিতে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার মন্ত্রজয় স্টিফেন ত্রিপুরা (সিএসসি) আরও বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা এখানে শিক্ষার্থীদের মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ি পথ হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে আসে। তারপরও আমরা বজায় রেখেছি স্বকীয়তা। এ উপজেলা পর্যায়ে সব বিভাগে আমাদের শিক্ষার্থীরা শ্রেষ্ঠ হয়।
কর্ণফূলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন,কেবল লেখাপড়াতেই নয়, আদর্শে, নীতি ও নৈতিকতায় বিদ্যালয়টি সারা দেশের উদাহরণ হয়েছে। শিক্ষা সহায়ক কাজের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি কর্ণফুলী উপজেলার সেরা স্কুল নির্বাচিত হয়েছে।