সীতাকুণ্ড প্রতিনিধিঃ
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা জালাল আহমেদ (৮০)। করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তার দাফন কার্যে এগিয়ে আসেননি কেউ। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কসহ দুই ছাত্রলীগ নেতা। সাথে যোগ দেন মৃত ব্যক্তির একমাত্র ছেলে সদ্য করোনা জয় করা পুলিশ সদস্য। তিন জন মিলেই লাশের গোসল দিয়েছেন।
তারপর ছাত্রলীগের সহপাঠীসহ কয়েকজনকে দিয়ে কবর খোঁড়ালাম। কিন্তু গোছল করানোর জন্য নেই কেউ!
তিনি বলেন, আমি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম যে হয়তো এসব কাজ আমাকেই করতে হবে। এজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদের কাছ থেকে গাইডলাইন ও নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে পিপিই নিয়ে সৈয়দপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন রানাকে ডেকে নিই। লাশটি গোছলের জন্য একজনকে পূর্ব থেকে প্রস্তুত রেখেছিলাম। যিনি সবসময় লাশ গোছল করিয়ে থাকেন। এদিন কিন্তু তিনিও আসেননি। পরে জানলাম, তার বাড়ির লোকজন তাকে আসতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে আমি, রানা ও মৃত মুক্তিযোদ্ধার পুত্র সদ্য করোনা জয় করে আইসোলেশনে থাকা পুলিশ সদস্যকে নিয়ে তিনজনে লাশ গোছল করাই।
ছাত্রলীগ নেতা মো. শায়েস্তা খান আরো বলেন, এদিন সকাল থেকে রাতে তার দাফন সম্পন্ন করা পর্যন্ত সিএনজি না আসা, কবরের জন্য কোদাল না দেওয়া, লাশ গোছলের মানুষটি না আসা, দাফন করতেও ভয়- এমন চিত্র আমি আগে কখনোই দেখিনি। তবে দাফনের আগে অল্প কয়েকজন নিয়ে জানাজা পড়ানো হয়েছে। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি আমার জীবনে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, ছাত্রলীগ নেতা শায়েস্তা খানসহ এ কয়েকজন যা করেছেন তা কল্পনাতীত। কেউ যখন লাশটির গোছলে এগিয়ে আসছিলেন না তখন মহামারী করোনার সমস্ত ভয়কে জয় করে তারা যেভাবে লাশটির দাফন সম্পন্ন করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, আসলে তিনি করোনায় আক্রান্ত কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবুও ভয়ে কেউ গোছল করাতে যাননি। এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ নেতা শায়েস্তা খানসহ কয়েকজন যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।