এম.এইচ মুরাদঃ
করোনায় বিপজ্জনক হয়ে ওঠছে চট্টগ্রাম। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। একই সাথে দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের সংখ্যাও। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২ এপ্রিল। ওইদিন থেকে ২৪ মে ঈদের ফিতরের আগে দিন পর্যন্ত ৫২ দিনে চট্টগ্রাম শহর ও জেলায় মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৭০২ জন। এরপর ঈদের দিন ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত মাত্র ৯ দিনে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬৯১ জন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা রোগী মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরো অনেকে। যাদের নমুনা নেওয়া যায়নি।
গত ২৫ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তের পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম অঞ্চলের আট জেলার নমুনা পরীক্ষার প্রথম আট দিন কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। নবম দিনে তথা ২ এপ্রিল নগরীর দামপাড়া এলাকার এক বৃদ্ধের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তাঁর সৌদি আরব ফেরত মেয়ের মাধ্যমে তিনি সংক্রমিত হন বলে চিকিৎসকেরা জানান।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, এপ্রিল পর্যন্ত কড়াকড়ি অবস্থা ছিল। মানুষ ঘর থেকে কম বের হয়েছে। তাই শনাক্তের সংখ্যা ও হার অনেক কম ছিল। মে মাসের শেষে দিকে সব ঢিলেঢালাভাবে চলতে থাকে। ঈদের পর খোলা হয় সরকারি-বেসরকারি অফিস, গণপরিবহন, গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটসমূহ। এতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের (গোষ্ঠী সংক্রমণ) দ্রুত বিস্তার ঘটছে। করোনা বিস্তার রোধের জন্য বিশেষজ্ঞরা যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর জোর দেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেও পরামর্শ দেন তাঁরা। নইলে বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হবে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২ এপিল থেকে ২ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ জন। যাদের মধ্যে নগরে ২ হাজার ৫৮০ জন এবং উপজেলার ৮১৭ জন। গতকাল ৩ জুন পর্যন্ত মারা গেছে ৮৪ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিপজ্জনক এলাকা এখন চট্টগ্রাম। প্রতি দিনেই ২০০ জনের ওপরে শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর দেশের জেলাগুলোর মধ্যে দুই নম্বরে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম। সাধারণ ছুটির সময়ে সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের লোকজন চট্টগ্রামে যাতায়াত করেছে। পোশাক কারখানা চালু হওয়ার কারণে কর্মীরা চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। এরপর গত ৩০ মে শুরু হয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিসের কার্যক্রম। একদিন পর পহেলা জুন থেকে শুরু হয় গণপরিবহন চলাচল। একই সাথে খুলেছে নগরীর কিছু কিছু মার্কেটও। এর মধ্যে অনেকের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাও বাড়ছে। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
গত ২৫ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর গত ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ রোগ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বাড়ায় এই অঞ্চলে বেড়ে চলেছে রোগী শনাক্তের সংখ্যাও।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদিনই করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে ঢাকার পর চট্টগ্রাম শনাক্তের দিক থেকে সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এটি এখন কঠিন উদ্বেগের বিষয়। মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে এবং এই মূহুর্তে সঠিক পরিকল্পনা এবং সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সামনে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে বলে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করছি।