এম.এইচ মুরাদঃ
প্রাণঘাতী কেরোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে যখন মৃত্যুর মিছিল তৈরী হয়েছে, এর মাঝে অনেকেই ওষুধ এবং হাসপাতালে যাওয়া ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠছেন। করোনা জয়ের এমন চারটি গল্প উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে।
এক
বিখ্যাত সিরিজ হ্যারি পটারের লেখিকা জে কে রাউলিং করোনাভাইরাসের লক্ষণে দুই সপ্তাহ ভুগেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ।’ এক টুইটবার্তায় স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে বসবাসরত এ লেখিকা বলেন, ‘দুই সপ্তাহ করোনাভাইরাসের লক্ষণে ভুগেছি কিন্তু পরীক্ষা করাইনি।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমি শ্বাসঃপ্রশ্বাসের অনুশীলন করে সুস্থ হয়েছি। নিয়মিত এ ব্যায়াম করেছি। এ কৌশল আমার সুস্থতায় খুবই সহায়ক হয়েছে। আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ।’
দুই
নাইজেরিয়ার ওয়ো রাজ্যের গভর্নর সেয়ি মাকিন্দে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি করোনা মুক্ত। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তিনি আইসোলেশন ছিলেন। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। অবশেষে তিনি জয় পেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, শুধু কালোজিরা আর মধু খেয়েই তিনি সুস্থ হয়েছেন। গভর্নর সেয়ি মাকিন্দে বলেন, ‘ওয়ো রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বোর্ডের নির্বাহী সচিব ড. মাইদেন ওলাতুনজি আমার হাতে কালোজিরা তুলে দেন। তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে দেন তিনি। আমি সেটা খেয়েছি। আর এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোই ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে আর করোনাভাইরাস নির্মূল করে।’ তিনি বলেন, ‘মাইদেন ওলাতুনজি কালোজিরা আর মধুর মিশ্রণটি সকালে একবার ও সন্ধ্যায় একবার খেতে বলেন। আমি সেই উপদেশ মেনে চলেছি। আমি এখন ঠিক আছি। সুস্থ অনুভব করছি। আমি এখন করোনা মুক্ত।’
তিন
হাসপাতালে না গিয়ে মাত্র সাতদিনে করোনা জয় করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ হৃদয়। তিনি বলেন, ‘দরিদ্র ও অসহায়দের মাঝে ত্রান বিতরণ করতে গিয়ে নিজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ি। করোনায় আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথমেই সতর্ক করি আমার সংস্পর্শে আসা সবাইকে। এরপর একটি রুমে শুরু করি একা থাকা।’
তিনি জানান, এ সময়ে আমি ভিটামিন সি খেয়েছি, গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করেছি এবং স্যাভলন পানি দিয়ে গোসল করতাম। শাররীক ব্যায়াম করতাম নিয়মিত এবং এক ঘন্টা দুই ঘন্টা পরপরই শুধু গরম পানি খেতাম। আমার মনে হয় এটা আমার করোনা দূর করতে খুব ভালো কাজে দিয়েছে। এক সপ্তাহ পরই আমি নেগেটিভে চলে এসেছি।
তিনি বলেন, ‘আমার যে জামা কাপড় ছিলো সেগুলো ঠিকভাবে ধুয়েছি, রুম প্রতিদিন স্যাভলন পানি দিয়ে ধুয়েছি। আমার মতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন, গরম পানি অবশ্যই খাবেন, সকাল-দুপুর-রাত এ তিন বেলা গড়গড়া করার চেষ্টা করবেন। আশা রাখা যায় আপনি করোনা পজিটিভ হলেও দ্রুত নেগিটিভ হয়ে যাবে।’
চার
কানাডায় কভিড-১৯’এ আক্রান্ত হন আলবাট্রার এডমিন্টনের বাংলাদেশী দম্পতি ফয়সল-ফারহানা। পর-পর স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজের বাসায় বন্দি থেকে, সকল নিয়ম মেনে এবং সাহসিকতার সাথে একেবারে আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।
ফেরদৌস এবং চৌধুরী ফারহানা ফারুকী দু’জনেই ফার্মাসিস্ট।ফারহানা বলেন, ‘আমার স্বামীর হার্টের সমস্যা এবং আমাদের দু’জনেরই ডায়াবেটিস রয়েছে। আমরা নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করে চলেছি এবং প্রতি ৬ ঘণ্টা বা যখনই আমরা জ্বর বা মাথা ব্যথা অনুভব করেছি তখন টাইলেনল (প্যারাসিটামল) ৫০০ মিলিগ্রাম গ্রহণ করেছি। আমরা গরম পানি এবং চিনি ছাড়া আদা চা পান করেছি। আমি প্রতিদিন ৩-৪ বার ভিটামিন সি ট্যাবলেট নিয়েছি। মুখে কোন স্বাদ ছিলো না, খেতে পারতাম না। তবে যতটা পারি খেয়েছি। যখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তখন আমি শ্বাসকষ্টের কিছু ব্যায়াম করেছি। কোভিড-১৯ এর জন্য আমরা কোনও অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করি নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সুস্থ হয়ে আমাদের ব্যবহৃত সব কাপড়-চোপড়, বিছানার চাদর, কম্বল, বাসন-কোসন ভালো করে পরিষ্কার করেছি। পরিষ্কার করেছি পুরো বাসাটা। এএইচএসের পরামর্শ অনুযায়ী ১৪ দিন পরে কাজ শুরু করেছি। এখন নিয়মিত কাজে যাচ্ছি।