এম.এইচ মুরাদঃ
নিউইয়র্ক নগরী ইতিমধ্যেই মৃত্যুপুরীর রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনের লাশের সারি দেখে আতঙ্কে সেখানকার বসবাসকারীরা। নগরীর ব্রঙ্কস এলাকার জ্যাক ডি ওয়েইলার হাসপাতালের ডা. ভেলি। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে তার কথাগুলো অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। তিনি সারা দিন তাঁর কাজে পেশাগত রীতি অনুসরণ করেন। নাকে অক্সিজেন টিউব লাগানোর আগে রোগীর হাত ধরেন। পরে বাসায় গিয়ে কাঁদেন তিনি। পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে কখনো এমন ঘটেনি। বৈশ্বিক মহামারি কালে চিকিৎসাব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কক্ষটি ঠাসা করোনায় আক্রান্ত রোগীতে। স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ ভিড়। অক্সিজেন মাস্কের ওপর দিয়ে দেখা যায় ভয়ার্ত চোখ। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে মানুষের। এ যেন পানিতে ডুবে যাওয়ার আকুতি। মানুষ যদি করোনা আক্রান্ত রোগীর শ্বাস নেওয়ার এই কষ্ট দেখতে পেত, তাহলে বুঝতে পারত। তবে হয়তো মানুষ ঘরে গিয়ে নিজেকে বন্ধী করত। হাসপাতালে স্বজনদের প্রবেশের অনুমতি নেই সেখানে। হয়তো আর কখনো দেখা পাবেন না স্বজনেরা। বাতাসে আতঙ্ক, ব্যথা, একাকিত্বের হাহাকার।
৩১ থেকে ৯৭ বছর বয়সী ৮০ জন করোনা রোগী এ রুমে ঠাসা। শয্যা একটার সঙ্গে আরেকটা প্রায় লেগে আছে। এক কোনায় কয়েকটি চেয়ার লাগানো। সেখানে বসে আছে নতুন আসা আরও কয়েকজন। তাঁরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা সবার চোখে। স্ট্রেচারের অপেক্ষায় এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পরে আছেন। এক শয্যা থেকে আরেকটিতে দৌড়াচ্ছেন। সহকর্মীদের পরস্পরকে চেনার উপায় নেই। সত্যি বলতে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ভীতসন্ত্রস্ত। অতিমাত্রায় ক্লান্ত। দীর্ঘ সময় নির্ঘুম থেকে চোখ টলটলায়মান।
এখনো রাস্তার পাশে, মাঠে, অলিতে গলিতে মানুষ জড়ো হচ্ছে । সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার গুরুত্বকে মানুষ হালকা ভাবে নিচ্ছে। তাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। যদিও কিছুটা দেরী হয়ে গেছে তবুও বলব এখনো সময় আছে সাময়িক কষ্ট হলেও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং সরকারের গৃহীত নির্দেশনা মেনে চলে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে ও দেশকে রক্ষায় সর্বোপরী মানুষকে রক্ষায় সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হবেন এবং সচেষ্ট ভূমিকা রাখবেন এই আশাই করি।