নিউজ ডেস্কঃ
চট্টগ্রামে করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তির মেয়ে ও তার শাশুড়ি পবিত্র ওমরা হজ্ব শেষে গত ১২ মার্চ সৌদি আরব থেকে ফিরেছিলেন।
সৌদি-ফেরৎ মেয়েকে বিমানবন্দর থেকে আনতে যাওয়া, মেয়ের হোম কোয়ারেন্টাইন না থাকা এবং সামাজিক, শারীরিক দূরত্ব না মানার ফলেই বাবা সংক্রমিত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে ৬৭ বছরের একজনের করোনা-আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন অনুসন্ধান ও নানাজনের সঙ্গে কথা জানা গেছে এসব তথ্য।
জানা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তি তার মেয়ে ও মেয়ের শাশুড়িকে গত ১২ মার্চ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নগরের দামপাড়ার ১ নং গলির (ন্যাশনাল হাসপাতালের পেছনে) বাসায় নিয়ে আসেন।
বাসায় খাওয়া-দাওয়া করে সেদিন আক্রান্ত ব্যক্তির শাশুড়ি সাতকানিয়ার বাজালিয়া, পুরানগড়ের বাড়িতে চলে যান। শহরের বাসায় রয়ে যান আক্রান্ত ব্যক্তির মেয়ে (৩২); তার স্বামী, স্বামীর আরও দুই ভাই থাকেন সৌদি আরবের মদিনায়।
মূলত স্বামীই তার মা ও স্ত্রীকে ওমরা করতে ১১ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব নিয়ে যান। সাতকানিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে না থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির মেয়ে বাবা-মা ও দুই ছেলেকে (বয়স ১২ ও ৭) নিয়ে দামপাড়ায় বাসা নিয়ে থাকেন।
এদিকে, আক্রান্ত ব্যক্তির শাশুড়ি ও সৌদিফেরৎ নারী সাতকানিয়ায় ফেরার পর প্রশাসনের তৎপরতায় ১৪ দিন হোম কোয়ারান্টাইনে থেকেছেন বলে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করলেও শহরে অবস্থানরত আক্রান্ত ব্যক্তির মেয়ে একেবারেই হোম কোয়েরাইন্টাইনে মানেননি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে।
এর মধ্যেই শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়ের বাবা করোনা-আক্রান্ত বলে তথ্য দিয়েছে ফৌজদার বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। বর্তমানে আক্রান্ত ব্যক্তি আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন। দামপাড়ার ওই বাড়িটিসহ আশপাশের আরও ৫টি বাড়ি শুক্রবার রাতে জেলা প্র্রশাসন থেকে লকডাউন করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর করোনা-আক্রান্তের সৌদি ফেরৎ মেয়ের সাতকানিয়া শ্বশুরবাড়ি লকডাউন করা হয়েছে জানিয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর এ আলম বলেন, সৌদি আরব থেকে ফেরার পর অন্যান্য প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার প্রক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির মেয়ের শাশুড়িকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ইতোমধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপরও ওই নারী ও তার আশপাশের বাড়িগুলোকে লকডাউনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানান ইউএনও।
এদিকে, সাতকানিয়ায় অবস্থানরত নারীর ছেলে বলেন, তার মা যথাযথ নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তার ভাবি মানেননি বলেই হয়তো আজকে এই দশা হয়েছে। আজ নতুন করে তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়নি এবং যেহেতু ৭ দিন আগে কোয়ারেন্টাইন মেয়াদ শেষ হয়েছে তাই বাড়ি লকডাউনের প্রয়োজন নেই বলে তিনি মনে করেন।
আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাক্তন প্রতিবেশি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহযোগি অধ্যাপক ও সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নূর হোসেন ভূইয়া শাহীন বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি ভদ্র, সজ্জন মানুষ। একসময় ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। যেহেতু আইসিইউতে নিতে হয়নি, আইসোলেশনে আছেন সেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তি সেরে উঠবেন বলে আশা করেন ডা. নূর হোসেন ভূঁইয়া শাহীন।