কামাল পারভেজ:
গত ১৩ জুন ২০২৫ইং থেকে ইরানে ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। ইরানের দুইজন সেনাপতি মৃত্যু হলেও ইরান ভিতু হয়ে পড়েননি। কিন্তু ইসরায়েলের কয়েকটি এজেন্ট দেশ ও মুসাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এই দেশগুলো বাহবা দিয়ে ইসরায়েলের পদধ্বনি গাইতে শুরু করলো।মুসলিম দেশগুলো ধ্বংস হয়ে যাক তারা সেটাই চায়। পুরো পৃথিবী ইহুদী খ্রিস্টান ও সনাতনী ধর্মের বিচরণ এবং জয়গান হক সেটাই তাদের স্বপ্নের ঘরে লালিত হচ্ছে। ঐদিকে আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প কৌশলে ইসরায়েলকে দিয়ে যুদ্ধের সংঘাতের দিকে ঠেলে তামাশার নাটক রচয়িতা করার চেষ্টা চালায়। ইসরায়েলকে সঙ্গ দিতে ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে হামলার মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ইরান তার ধৈর্যের পরিক্ষা দিচ্ছিলো। ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে পাল্টা জবাবে প্রস্তুতি নিয়ে গত ২৩ জুন ইরান কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়। এবার আমেরিকা নড়েচড়ে বসে। পরেরদিন ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বিরতির কথা জানান। আমেরিকা এমনই একটি দেশ সবসময় চায় গরীবের উপর খবরদারী করা এবং যখনই নিজের স্বার্থের উপর আঘাত আসে তখনই আপোষ মিমাংসার প্রস্তাব নিজ থেকেই দিবে। যদি দেখছে কোনো দেশ পাল্টা জবাব দিতে পারছে না তখন তাকে আরও গলা চেপে ধরে। অন্যরা যদি আপোষের কথা বলে সেটাকে এরিয়ে ধুলিশাত করে দেওয়াই তার কাজ। তখন কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তাদের মাথায় রাখেন না। অন্য কোনো দুই দেশের সমস্যা হলে সেখানে মানবাধিকার শব্দটি আমেরিকাই আগে উচ্চারণ করে প্রতিবাদ জানাবে। অথচ গাজা ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের অমানবিকতার নির্যাতন হত্যা হামলা এই দীর্ঘদিনের যুদ্ধের অবসান বিষয়টি আমেরিকা না চুকিয়ে ন্যাটো বাহিনী দিয়ে ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ করে ইসরায়েলের হাতকে শক্তিশালী করে তুলে। পৃথিবীর সবচাইতে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ হলো আমেরিকা। জাতিসংঘের কথা বলতে গেলে আমার লজ্জা হয়। কারণ জাতিসংঘ হচ্ছে এমনই একটা সংস্থা যেটাকে আমি পতিতালয়ের নারীদের চাইতে যদি কোনো আরও নিচুস্তরের বেশ্যালয় থাকে সেটাই হলো জাতিসংঘ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় স্ত্রী বলায় যায় জাতিসংঘকে।
এবার আসি ইরান বিষয়। আমি আগেই বলেছি ইরান – ইসরায়েলের যুদ্ধ কোন পথে। প্রথমতো ইরান এমনই একটা রাষ্ট্র তারা কারো দাসত্বে থাকতে রাজি নয়। একটা সয়ংসম্পূর্ন ও সুশৃঙ্খল দেশ। ইসরায়েল প্রযুক্তির দিকে এগিয়ে থাকলেও ইরান তার নিজস্ব বলয়ে ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক ও জ্ঞান গবেষণার বিশ্বাসের জায়গাটা প্রসার ঘটাতে পেরেছে। আমেরিকার তাবেদারী করছে না বলেই আমেরিকা সুকৌশলে ইসরায়েলকে দিয়ে নাটকীয়তায় যুদ্ধের মহা উৎসব চালাতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত পুরো বিশ্ব, তবে মুসাদের এজেন্টরা বেশি চিন্তিত কারণ, ইসরায়েল যদি হেরে যায় তাহলে আমেরিকাসহ খ্রিস্টান ও ইহুদী রাষ্ট্রগুলো জোটবদ্ধতা ভেঙে যেতে পারে। তাদের ঐক্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে পুরো বিশ্বে। এদিকে মুসাদের এজেন্ট দেশগুলো ভেবেছিলো ইরান হয়তো পাল্টা জবাব দিতে ব্যর্থ হবে। পিছু হটবে মুসলিম রাষ্ট্র ইরান। ইরান তার কৌশলগত ভাবে পাল্টা হামলা চালায় বলেই মার্কিন ঘাটির উপর আঘাত আসে। তবে একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো ইরান তার ধৈর্যতা যেমন ভাবে দেখাতে পারে তেমনি পাল্টা জবাবের মুখোমুখিও হতে পিছুপা কখনোই হবে না। দুঃখজনক হলো ইসরায়েল – ইরানের যুদ্ধটাকে পুঁজি করতে চেয়েছিলো ইরানের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশ। তাদের নিরবতা ছিলো শক্তিশালী ইরানকে পরাস্ত করতে পারলে আমেরিকার দাসত্ব হিসেবে সুফল ভোগ করতে পারবে। কিন্তু ইরান সেই সুযোগ সন্ধানীদের আশার স্বপ্নে জলে ঢেলে দিলো। তবে কতদিন মার্কিনরা এই নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘন চালাবে সেটাই হচ্ছে বিশ্বের একটা প্রশ্ন। আমরা যাই কিছু করি না কেন, একদিন শক্তির অবসান ঘটবেই।
লেখক – সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।