স্টাফ রিপোর্টার:
খেলাপি ঋণ শ্রেণীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। নতুন নির্দেশে ব্যাংকগুলোকে মেয়াদি ঋণ ও কৃষিঋণের ক্ষেত্রে কিস্তি বকেয়া হওয়ার পরবর্তী তিন মাস বা ৯০ দিন পার হলেই খেলাপি হিসেবে শ্রেণীকরণ করতে হবে। আগে এই দুই খাতে ঋণ গ্রহণকারী বকেয়া কিস্তি পরিশোধে মোট ৯ মাস সময় পেতেন। গত সেপ্টেম্বরে এই মেয়াদ তিন মাস কমিয়ে ছয় মাস করা হয়েছিল।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে এই নতুন নির্দেশ কার্যকর করতে ব্যাংক ও গ্রাহকদের প্রস্তুতিমূলক সময় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি বাস্তবায়ন হবে ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে।
উল্লেখ্য, নগদ ঋণ বা চলতি মূলধন ঋণ (সিসি লোন), ব্যক্তিগত ও ভোক্তা ঋণের ক্ষেত্রে আগে থেকেই কিস্তি বকেয়া হওয়ার পরবর্তী তিন মাস বা ৯০ দিন পার হলেই খেলাপি হিসেবে শ্রেণীকরণ করার বিধান রয়েছে। এই বিধানে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী খ‘ণের শ্রেণীকরণ সম্পর্কিত বিধিবিধান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অংশ হিসেবে এই নতুন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করতে আমরা আরও কঠোর হব। সর্বশেষ নির্দেশনা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষার অংশ।’
সহকারী মুখপাত্র আরও বলেন, ‘সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি বেড়ে যাওয়ার পেছনে কারণ ছিল যে আমরা মেয়াদি ঋণের শ্রেণীকরণে খেলাপি হওয়ার মেয়াদ তিন মাস কমিয়েছিলাম। আগামী এপ্রিল থেকে নতুন নির্দেশনা কার্যকর হলে জুন শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশ পাবে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে নীতি প্রণয়নের কাজও সহজ হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক তার আয় থেকে ঋণের শ্রেণি অনুযায়ী একটি অংশ প্রভিশন বা নগদ সংরক্ষণ করবে। ভালো ঋণের (স্ট্যান্ডার্ড ১, ২) ক্ষেত্রে প্রভিশনের হার ঋণের ১ শতাংশ, স্পেশালি মেনশনড্ অ্যাকাউন্ট বা বিশেষ হিসাবে লিপিবদ্ধ ঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশনের হার ৫ শতাংশ, সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা মন্দ ঋণের ক্ষেত্রে এই হার ২০ শতাংশ, ডাউটফুল বা সন্দেজনক ঋণের ক্ষেত্রে এই হার ৫০ শতাংশ এবং ব্যাড/লস বা ঋণগ্রহীতা কর্তৃক ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনা হারিয়ে গেলে ওই ঋণের শতভাগ প্রভিশন করবে ব্যাংক। এ কারণে যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি, সেই ব্যাংকে তারল্যসংকট তৈরি হয়ে থাকে।
গত সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। জুন মাসের তুলনায় খেলাপি ঋণের এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। আর মার্চ শেষে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।