মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসূলের আদর্শ, শিক্ষা ও বাস্তবায়ন


প্রকাশের সময় :১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ৪:৫০ : পূর্বাহ্ণ

মাঈন উদ্দীন রুবেল:

মাহে রবিউল আউয়াল হিজরী বর্ষের তৃতীয় মাস। গুরুত্ব এবং মর্যাদার দিক থেকে এই মাসে ঈমানদার মুসলমান ও আশেকে রাসূলগনের অন্তরে নবী প্রেমের এক মহা সমুদ্রের জোয়ারের ন্যায় ঢেউ খেলে। 

প্রাক-ইসলামী যুগে আরবস্থানে যখন চরম উচ্ছৃঙ্খলতা, পাপাচার,ব্যাভিচার, মিথ্যা, হত্যা, লুন্ঠন, মদ্যপান, জুয়ায় ভরপুর, নানান অপকর্ম,অন্যায়-অপরাধ, দ্বন্ধ-সংঘাত,মারামারি -হানাহানি, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য, নৈরাশ্য আর হাহাকার বিরাজ করছিল।  ধর্মের নামে সর্বত্র বিরাজ করছিল শিরক, কুফর আর ধর্মহীনতা। নারী সমাজ পরিণত হয়েছিলো পণ্য সামগ্রীতে। তাদের ব্যবহার করা হতো আসবাবপত্রের মতো। তাদের ছিলো না কোনো অধিকার, ছিলো না কোনো মর্যাদা ও সম্মান। কন্য সন্তান হলে জীবন্ত মাটিতে পুতে পেলা হতো,যেটা আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারের যুগ নামে পরিচিত ছিলো, ঠিক ঐ সময় মানবতার মুক্তির দিশারী সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সারা জাহানের হিদায়েতের জন্য আবির্ভূত হলেন। বিশ্ব মানতার জন্য আল্লাহর এক অনন্য রহমত স্বরুপ রাসূল (সাঃ) কে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেন। 

রবিউল আউয়াল মাস এমন একটি মহাসম্মানিত ও গৌরবান্বিত মাস, যেই মাসে তশরীফ এনেছেন আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলার প্রিয় প্রিয় হাবীব ও মানব জাতির কল্যাণকামী এবং উম্মতের মুক্তিদাতা আখেরী নবী হুজুর পুরনূর (সাঃ), আকায়ে নামদার, শফিউল মুজনেবীন, রহমতুিল্লল আলামিন, হযরত আহমদে মোজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার ছোবহে ছাদেকের সময় পবিত্র মক্কা মোয়াজ্জামায় কুরাইশ বংশে হযরত মা আমেনার (রাঃ) পবিত্র শেকমে পাক থেকে দুনিয়ার বুকে তশরীফ আনলেন হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদীছে পাক এবং অন্যান্য কেতাবের রেওয়ায়েত মতে কোন রকম অপবিত্রতা ব্যতিরেকে সম্পূর্ণ পাক পবিত্র অবস্থায় বেহেশ্তী পোশাক পরিহিত অবস্থায় , চোখে সুরমা দেওয়া অবস্থায় আল্লাহর পেয়ারা হাবীব (সাঃ) তশরীফ আনলেন। দুনিয়ার জমিনে তশরীফ এনেই তিনি আল্লাহর দরবারে সেজদায় পড়লেন এবং শাহাদাত অঙ্গুলী উপরে তুলে আল্লাহর একাত্মতা এবং স্বীয় নবুওতের ঘোষণা দিলেন এবং উম্মতের জন্য দোয়া করলেন “রাব্বি হাবলী উম্মতি, রাব্বি হাবলী উম্মতি”।

বিভিন্ন রেওয়ায়েত মতে, হযরত মা আমেনা (রাঃ) বর্ণনা করেন, “আমার শিশু সন্তান যখন ভূমিষ্ঠ হচ্ছিল তখন আমি শুনতে পাচ্ছিলাম অনেক লোকের আওয়াজ। তারা সালাম দিতে দিতে আমার ঘরের দিকে আসছিল।” রেওয়ায়েতে রয়েছে আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলার নির্দেশে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এর নেতৃত্বে ইসলামী ঝাণ্ডা নিয়ে মিছিল বা জুুলুস সহকারে হাজার হাজার ফেরেস্তা আখেরী নবী ইমামুল আম্বিয়া নবী করীম (সাঃ) কে মোবারকবাদ ও সালাম আরজ করতে করতে হযরত মা আমেনার (রাঃ) গৃহের দিকে আসছিলেন এবং এই ঝান্ডা পবিত্র কাবা শরীফের উপরে স্থাপন করেন। এই বিষয়টিই চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দেদ আ’লা হযরত আহমদ রেজা খাঁন ফাজেলে বেরলভী (রহঃ) তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন- “ফেরেশতোঁ ­­­কী সালামী দেনে ওয়ালী ফৌজ গাতি থী, জনাবে হযরতে মা আমেনা ছুনতি থি আওয়াজ আতি থি”। আল্লাহর পেয়ারা হাবীব (সাঃ) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (সাঃ) এর ধরাধামে শুভাগমনের পবিত্র দিনটিকে উপলক্ষ করে সমগ্র দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ নবী প্রেমিক মুসলমানগণ উদযাপন করেন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর সাধারণত অর্থ হলো  ‘ঈদ’ অর্থ আনন্দ আর ‘মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর অর্থ হলো পবিত্র জন্মদিন বা খোশরোজ। মিলাদুন্নবী আরবী শব্দ। আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নবী করিম (সাঃ) এর শুভাগমন। সুতরাং ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) এর সার্বিক অর্থ দাড়াঁয় নবী করীম (সাঃ) এর শুভাগমন উপলক্ষে আনন্দ বা খুশী উদযাপন করা। এখানে একটি প্রশ্ন থাকতে পারে আমাদের আরো দুটি ঈদ রয়েছে। একটি পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের দিন অর্থাৎ শাওয়াল মাসের প্রথম দিন এবং আরেকটি ঈদ হল জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহা বা পবিত্র কোরবানির ঈদ। এই দুইটা ঈদ আমরা প্রতি বছর উদযাপন করে থাকি। এই দুটি ঈদ দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলমান অতি মর্যাদা সহকারে পালন করে থাকেন। আর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) এমন একটি অনুষ্ঠানের নাম, একটি দিবসের নাম,ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার  পক্ষ থেকে এমন এক নেয়ামত যা গ্রহণ, পালন এবং যার শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে থাকেন। 

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা হাদীসে কুদসীতে নবী করিম (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে এরশাদ করেন- “লাওলাকা লামা খালাকতুল আফলাক।” অর্থাৎ ‘‘(হে নবী), আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে আমি কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” এই হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পরিষ্কার করে স্বীয় রসুল (সাঃ) এর সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। এই বিশ্ব জগৎ, আসমান-জমিন, লৌহ- কলম,বেহেশত-দোজখ, আরশ-কুরসী সব কিছু সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার প্রিয় হাবীব (সাঃ) কে আঠার হাজার মাখলুকাতের সামনে প্রকাশ করা। শুধু প্রকাশ করা নয় আল্লাহর রহমত স্বরূপ মানবজাতির কল্যাণে দুনিয়ার জমিনে প্রেরণ করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেছেন, “ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আলামীন”, অর্থাৎ হে রসূল (সাঃ) সমগ্র জগৎবাসীর জন্য আমি আপনাকে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। ওই আয়াত দ্বারা প্রমাণ করে রসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। আরও ইঙ্গিত বহন করে যে, আল্লাহ পাক যতটুকুর জন্য রব এবং তার প্রিয়বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন ততটুকুর জন্য রহমত। আল্লাহর রুবুবিয়্যাত তথা মালিকানা যে পর্যন্ত বিস্তৃত, ত্রিভূবেনর বাদশা নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুয়তও সে পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই এমন পেয়ারা নবীর শুভাগনের দিনকে বলা হয়, সকল ঈদের সেরা ঈদ- ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)।

আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলা মানব জাতির জন্য অফুরন্ত রহমত ও নিয়ামতের ভাণ্ডার খুলে দিয়েছেন। সুরা আর রাহমানে আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলা এমন অনেক নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন এবং সে সব নেয়ামতের কথা বান্দাগণ যাতে অস্বীকার না করে তার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা আরেক আয়াতে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, “ফায্কুরুনী আযকুরকুম, ওয়াশকুরুলী ওলা তাকফুরুন”। অর্থাৎ, “যদি তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব এবং আমার শোকরগুজার কর এবং না শুকরি করোনা”। বুঝা গেল যে, আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের বা রহমতের শুকর গুজার হওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যই কর্তব্য। আরেক আয়াতে করিমায় আল্লাহ তবারক তাআলা স্বীয় হাবীব (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কুুল ইয়া এবাদিয়াল্লাজিনা আছরাফু আলা আনফুছিহিম, লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ্। ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ জুনুবা জামিয়া, ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহীম”। এই আয়াতে আল্লাহ তবারকা ওয়া তাআলা স্বীয় হাবীব (সাঃ) এর মাধ্যমে তার গোনাহগার বান্দাদেরকে গোনাহের কারণে তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন তাদের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। যে রহমতের কথা আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন সে রহমত তো উপরে উল্লেখিত। এক হাদীছে রাসূলে করিম (সাঃ) এরশাদ করেন, “আনা কাছেমুন ওয়াল্লাহ ইয়ুতি”। অর্থাৎ, “আল্লাহ দান করেন আর আমি বন্টনকারী”। সুতরাং, নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা সকল মানব জাতির জন্য বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য, যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই। শুকরিয়া আদায় করার একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো বেশি বেশি পরিমাণে নবী করিম (সাঃ) এর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ করা যা কোরানুল করিমের ঘোষণা মতে আল্লাহ তার সমস্ত ফেরেশতাদের নিয়ে প্রতিনিয়ত বিরতিহীনভাবে দরুদ শরীফ পাঠ করে থাকেন এবং আমাদেরকে ও নবী করিম (সাঃ) -এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

নেয়ামতের শুকরীয়া আদায়ের আরেকটি এবং বড় এবাদত হলো খুশী উদযাপন করা। আর রবিউল আউয়াল মাসের শুভগমন হয়, বিশ্বব্যাপী আশেকে রাসূলগনের অন্তরে স্বাভাবিকভাবে নবী-প্রেমের নতুন হাওয়া দোলখেতে থাকে। আবার রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন, এ বিষয়ে কোনো মতানৈক্য নেই। আশেকে রাসূলগনের মতে,সুন্নি ওলামায়ে কেরামদের  মতে নবী করিম (সাঃ) এর আগমন যেমন উম্মতের জন্য রহমত  তেমনিভাবে দুনিয়া ছেড়ে যাওয়াটা ও রহমত। কারণ এটা আল্লাহর বিধি-বিধান, সবাইকে মৃত্যু স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক নবী-রাসুলগনই এর শিক্ষা দিয়ে গেছেন, উনারাও এর ব্যতিক্রম নয়। উনারাও প্রভূর ডাকে সারা দিয়ে পৃথিবী থেকে পর্দা করেছেন।   তাই প্রকৃত নবী প্রেমিকগন যারা নবীকে জানের চেয়ে পরিবারের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তারা সিরাতুন্নবী পালন না করে নবীর ভালোবাসা নিয়ে মিলাদুন্নবী উদযাপন করে। কারণ আমাদের প্রিয় নবীর দুনিয়া আসা ও যাওয়া দুটোই সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। তাছাড়া ইসলামে মুসলমানদের ইন্তেকালের পর তিনদিন পর্যন্ত শোক পালন করার বিধান রয়েছে এর বেশি নয়। তাই বিশ্বব্যাপী নবী প্রেমিকগন পুরো মাসব্যাপী মিলাদুন্নবী পালন করে, সিরাতুন্নবী নয়। কারণ তিনি আমাদের থেকে দুনিয়াবীভাবে পর্দা করেছেন কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত রহমত হিসেবে তিনি সর্বদা বিরাজমান যা আশেকে রসূলগন মনে প্রাণে বিশ্বাস করে এবং নবী করিম (সা:) সর্বদা সর্বস্থানে হাজের ও নাজের হিসেবে বিশ্বাস করেন। আর এটা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তারা নবীর ভালোবাসায় নবীর আগমনকে জুলুছ করে স্বাগত জানাই দরুদ ও সালামের মাধ্যমে এবং তিনিই হায়াতুন্নবী ও রাসূল যার পরে আর কোনো নবী রাসূল আসবে না।

আল্লাহপাক বলেন, ‘যারা ঈমানদার তাদের মহব্বত গভীর হওয়া স্বাভাবিক’ (সূরা বাকারা: ১৬৫)।

আল্লাহপাক আবার বলেন, ‘হে রাসুল! আপনি বলে দিন যে, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তাহলে আমার অনুকরণ করো, তাহলে আল্লাহই তোমাদের ভালোবাসবেন। ’এ দুই আয়াত থেকে বোঝা গেল যে মুমিন আল্লাহকেই বেশি ভালোবাসেন এবং এ ভালোবাসা প্রকাশের একমাত্র পথ হলো রাসুলের অনুসরণ, অনুকরণ ও আনুগত্য। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসা ও তাঁর দেখানো পথ অনুযায়ী জীবন-যাপন করা ঈমানের অংশ। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (রহঃ) তার কিতাবে স্বতন্ত্র একটি শিরোনাম এনেছেন, যার অর্থ ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ’। বিশিষ্ট সাহাবী আনাস (রাঃ) ও আবূহুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ আমি তার নিকট নিজ পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ হতে প্রিয় না হবো’। (বুখারী শরীফ : হা: ১৫, মুসলিম শরিফ: হা: ৪৫, মুসনাদে আহমদ: ১২৪৩)।

উম্মতের জন্য রাসূল (সাঃ) এর ১০ শিক্ষা

১. আল্লাহকে স্মরণ: হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহকে স্মরণকারী এমন কোনো দলই নেই, যাদের ফেরেশতারা ঘিরে রাখে না, তারা রহমতে পূর্ণ হয় না, তাদের ওপর প্রশান্তি বর্ষিত হয় না এবং আল্লাহ তার সামনে উপস্থিতদের কাছে তাদের স্মরণ করেন না।” (তিরমিজি)

২. কুরআনের সংষ্পর্শতা: হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) এর দীর্ঘ এক হাদীসে বলা হয়েছে, “যখন সবকিছু তোমাদের কাছে রাতের আঁধারের মত অস্পষ্ট হয়ে যাবে, তখন তোমরা কুরআনকে আঁকড়ে ধর। কেননা এটি তোমাদের জন্য শাফায়াতকারী ও বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা দানকারী। যারা একে গ্রহণ করবে, এটি তাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। যারা একে প্রত্যাখান করবে, জাহান্নাম হবে তাদের গন্তব্য।” (কানযুল উম্মাল)

৩. বিনয়: রাসূল (সাঃ) এর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি দারিদ্র বা অভাব ছাড়াই আল্লাহর সামনে নিজেকে বিনয়ী হিসেবে পেশ করে, সে বরকতে পূর্ণ হবে। (তানবিহ আল-কাওয়াসির)

রাসূল (সাঃ) ছিলেন বিনয়ের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পরিবার, সমাজ ও অন্যান্য সকলের সাথেই তার আচরণ ছিল বিনয়পূর্ণ। 

৪. সাদাকা: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “সাদাকা আদায়ে দেরি করো না, কেননা এটি দুর্দশার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।” (তিরমিজি)

খাবার বা অন্যকোনো সামগ্রী দেওয়ার মাধ্যমে হোক অথবা বিনয়ী ব্যবহারের মাধ্যমে হোক, সাদাকা মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈশিষ্ট্য। 

৫. প্রতিবেশির প্রতি দয়া: হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ বিচারের দিনের উপর বিশ্বাস রাখে, তার উচিত নয় নিজের প্রতিবেশির ক্ষতি করা। আল্লাহ ও শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাসকারী সকলের উচিত তার মেহমানের আন্তরিক খেদমত করা এবং উত্তম কথা বলা নাহয় চুপ থাকা।” (বুখারী)

৬. ন্যায়বিচার: হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “প্রতিদিনের সূর্যোদয়ে মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর (আল্লাহর নেয়ামতের জন্য) আবশ্যিক সাদাকা আছে। দুই ব্যক্তির মধ্যে ন্যায়বিচার করা সাদাকা। (বুখারী)

আমাদের চারপাশের লোকদের প্রতি আমরা শুধু দয়ালু ও বিনয়ীই হবো না, পাশাপাশি তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করাও রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষা। হাদীস অনুযায়ী এটি আমাদের সাদাকার অংশ।

৭. মনে রাগ না রাখা: হযরত আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয়, সে যেনো বসে পড়ে। যদি তার রাগ পড়ে যায় তাহলে ভালো, তাতেও কাজ না হলে তার উচিত শুয়ে পড়া।” (আবু দাউদ)

৮. শৃঙ্খলা: শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশৃঙ্খলামুক্ত থাকাও আমাদের জন্য রাসূল (সাঃ) এর জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

৯. কথার পূর্বে গভীর চিন্তা করা: রাসূল (সাঃ) এর জীবন থেকে আমরা দেখি, তিনি অপ্রয়োজনে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কথা বলতেন না। 

১০. সক্রিয় চিন্তা ও অনুশীলন:
মুসলমান হিসেবে রাসূলে পাক (সাঃ) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষভাবে চিন্তার মাধ্যমে উপলব্ধি করার এবং সক্রিয়ভাবে অনুশীলন করার।

অতএব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালবাসার অর্থ হলো, তিনি যে সকল গুণে গুণান্বিত ছিলেন সেগুলোর চর্চা করা ও নিজের মাঝে সেগুলোর বাস্তবায়ন এবং যে সকল বিষয় তিনি পরিহার করেছেন ও পরিহার করতে বলেছেন তা বর্জন করা। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনীত দ্বীনকে তোমরা আকড়ে ধর, আর যা নিষেধ করেছেন তা পরিহার কর’। (আল হাশর : ৭)।

তাই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর আদর্শকে বুকে ধারণ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে হালাল রুজি-রোজগার করে সৎভাবে জীবন যাপন করে তার দেখানো পথে মতে চলে আল্লাহ ও তার হাবীব (সাঃ) এর সন্তুষ্টি অর্জন করাই প্রত্যেক ঈমানদার মুসলমানদের কাজ।

আমার এ প্রয়াসের কারণে যেন আল্লাহ পাকের পরে প্রিয় নবীর প্রতি প্রেম মুহব্বত সর্বোচ্চ হয় এবং তার সাথে যাতে দুনিয়ায় আর করো তুলনা না হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার পর সৃষ্টি জগতে তিনি সুউচ্চ, অতুলনীয়। যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে প্রেরিত।  যিনি তৎকালীন আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ অর্থাৎ অন্ধাকার যুগ থেকে আলোর যুগ দান করেছেন। তৎকালে কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে নিষ্ঠুরভাবে মাটিতে জীবন্ত পুতে ফেলত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) আবির্ভাবের পর থেকে তিনিই নারীদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। তাই নবীর আগমনে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে নারীদের বেশি বেশি খুশি উদযাপন করা ও প্রিয় নবীর প্রতি অসংখ্য অগনিত দরূদ পাঠ করা উচিত।

মাঈন উদ্দীন রুবেল
লেখক,প্রাবন্ধিক ও ব্যাংকার

ট্যাগ :