স্বপ্নীল দাস (পটুয়াখালী প্রতিনিধি):
পটুয়াখালী পৌরসভার কাছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ৯ কোটি ৯৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯২ টাকা। এ নিয়ে প্রতি মাসে বকেয়া বিল আদায়ে বিদ্যুৎ অফিস লিখিত চিঠি দিলেও কোন সাড়া দিচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলেও রংবেরঙের বাতিতে ঝলমলে শহরের চিত্র। যা নিয়ে সমালোচনা চলছে নানা মানুষ।
বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করেই শহরের সার্কিট হাউজ থেকে কলাতলা পানির ট্যাংকি পর্যন্ত ফোর লেনের সড়কটিকে রং বেরংয়ের বাতি জ্বালিয়ে আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত করা হচ্ছে।
এটিকে অনেকে নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে মেয়রের কূটকৌশল হিসেবে মনে করছেন। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করাই একমাত্র উপায় অথচ সেই জনগণকে বোকা বানিয়ে শহরকে আলোকসজ্জা করে নির্বাচনী বৈতরণি পাড় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ এমনটাই অভিযোগ করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের।
তবে এই বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার বিষয়টিকে গুজব বলে দাবি করছেন পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পৌরবাসী অভিযোগ করেন, প্রতি বছর পৌর ট্যাক্স বাড়িয়েও যদি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকে ১০ কোটি টাকা তাহলে এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছুই থাকেনা। যেখানে ১০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া সেখানে রাত অবধি এই সড়কে এত আলোকসজ্জার কোন মানে আছে কিনা তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটি হতে পারে তরুণ ভোটারদের মন আকৃষ্ট করতে মেয়রের কূটকৌশল। যাই হোকে জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে যেহেতু এই বকেয়া বিল পরিশোধ করা হবে সেহেতু জনগণকে এমনভাবে ধোঁকা দেওয়া মেয়রের উচিত হয়নি। হয়তো তিনি এখন বলতে পারেন যে, ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে এমন আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কিন্তু সেটিও যুক্তিসংগত নয়। কারণ নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার পর থেকেই এই সড়কে এমন আলোকসজ্জা করে বিদ্যুৎ অপচয় করছেন মেয়র সাহেব। ফলে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পটুয়াখালী ওজোপডিকো অফিস সূত্রে জানা গেছে- পৌরভবন, কমিউনিটি হল, পানির পাম্প ও পৌর এলাকার রাস্তাসহ প্রায় ৩২টি হিসাবের বিপরীতে পৌরসভা এ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। গত সাড়ে চার বছর ধরে পটুয়াখালী পৌরসভায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। বিভিন্ন মাসে পৌর কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ বিল দিলেও বেশির ভাগ মাসেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। এ নিয়ে প্রতি মাসে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপডিকো) পটুয়াখালী বারবার বকেয়া বিল পরিশোধে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে বিল পরিশোধ করেননি তারা।
পটুয়াখালী বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দীন মোহাম্মদ মহিম জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। যা এখন প্রায় ১০ কোটি টাকার মত দাঁড়ায়। এ নিয়ে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদকে বারবার জানানো হয়। তবে ২০২৩ সালের জুন থেকে প্রতিমাসের বিল প্রতি মাসে দিলেও এখনো বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা উন্নয়ন সভায় পৌরসভার বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সভায় উপস্থাপন করা হলে বিষয়টি জেনে জেলা প্রশাসক মহোদয়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তবে বর্তমানে পৌরসভা নির্বাচন চলমান থাকায় বিষয়টি নির্বাচনের পর দেখার ব্যাপারে আলোচনা হয়। নির্বাচনের পর যদি পৌর কর্তৃপক্ষ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে তখন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানানো হয়।
পৌরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজ উদ্দিন মজুমদার জানান, এটি যেহেতু বড় বিষয় সেহেতু মেয়র মহোদয়ের সাথে আলাপ করলে ভাল হয়।
বিষয়টি জানার জন্য পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ এর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, আসলে এটা একটা গুজব। বিষয়টা হলো পটুয়াখালীর বিদ্যুৎ বিলের মিটারগুলো চেইঞ্জ করার পরে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে প্রতিমাসে বিল আসে ১৫/১৬ লাখ টাকার মধ্যে। যা পূর্বে আসতো ৩৫/৪০ লাখ টাকার মতো। প্রতি মাসে প্রায় ১৭/১৮ লাখ টাকা ভৌতিক বিল আসতো। যেটা আমরা নিরুপুন করে মন্ত্রণালয়ে কথা বলে পত্র প্রদান করেছি। বকেয়া যে বিলটি রয়েছে সেই সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে।