কক্সবাজার প্রতিনিধি:
শুধু শখের বশে এদিক-সেদিক সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়া নয়, সাইক্লিং তারুণ্যের বিশেষ প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সপ্তাহান্তে বাসায় গা এলিয়ে দেয়ার পরিবর্তে অনেকেই সাইকেল নিয়ে চলে যায় চকরিয়া শহর কিংবা কক্সবাজার জেলার আশপাশের জায়গাগুলো চষে বেড়াতে। আজ কৈয়ারবিল তো কাল বমুবিলছড়ি এভাবেই চলছে সাইকেলচারীদের প্রত্যেকটা ছুটির দিন।সাইকেলের মায়া যেন অদ্ভুত এক নেশা হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।এমনকি শুধু সমতলেই নয়, পাহাড়, নদী পেরিয়ে সাইকেলে চেপে বহুদূরের পথ পাড়ি দেয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন এখন অনেক দ্বিচক্রযান-প্রেমীরা।
সাইকেল ভ্রমণ যে সবসময় নেশা, পেশা কিংবা স্রেফ ভ্রমণের কাজে ব্যবহার করে তা কিন্তু নয়। যুগে যুগে সাইকেল নিয়ে অনেকে বেরিয়ে পড়েছেন সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে। ২০১৪ সালে ‘আপনার সন্তানকে স্কুলে পাঠান, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করুন’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই, সুস্থভাবে বাঁচতে চাই’, ‘ঘুষ ও দুর্নীতি হতে বিরত থাকুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান’, ‘মাদক থেকে বিরত থাকুন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকুন’, ‘ফরমালিন ব্যবহার রোধ করুন, সুস্থভাবে বেঁচে থাকুন’, ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন বাংলাদেশ বাঁচান’ এই ছয়টি স্লোগানকে সামনে রেখে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ সাইকেলে পাড়ি জমান বাংলাদেশি ২০ যুবক।
এছাড়া বিশ্বব্যাপী ‘সাইক্লিং ফর অ্যাওয়ারনেস’ নামে গোটা পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সব কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অনেক সাইকেলপ্রেমীরাই।বাংলাদেশের তরুণরা এখন সাইকেল নিয়ে নিজেদের ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলেছে Easy Riders Bicycle Club (www.facebook.com/easyridersbicycleclubchakaria) নামের কমিউনিটি।কিন্তু কিসের টানে দ্বিচক্রযানের সঙ্গে এই ভালোবাসায় জড়িত হয়েছেন তারা?সেই প্রশ্নের উত্তরে ERBCC ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইক্লিস্ট মোহাম্মদ রাফফান বলেন, পুরো শহর যখন ঘুমিয়ে আছে তখন আড়মোড়া ভেঙে চুপিচুপি বাড়ির মূল ফটক পেরিয়ে একে একে বেরিয়ে পড়ে পঙ্গপালের দল।হিমশীতল ঠান্ডায় যখন সবচেয়ে সাহসী ছেলেটাও কাবু হয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে, তখন এই দলছুটেরা কুয়াশায় লাইটের আলো ফেলে ভোরের অন্ধকার চিরে একে একে ছুটছে শহরের সীমানা ছাড়িয়ে। গন্তব্য শহর ঘেঁষা গ্রামের মেঠো পথ।সাদা মাটির গন্ধ আর চার পাশে সবুজ গাছপালা শুধু মনকে প্রশান্তিই দেয় না বরং সহ-সাইক্লিস্টদের সঙ্গে গাঁয়ের টং দোকানে চা আর তুমুল আড্ডা ফিরিয়ে দেয় সজীব আর প্রাণবন্ত দিনগুলো।মুঠোফোনসর্বস্ব একঘেয়ে জীবন থেকে বেরিয়ে এসে একটু প্রশান্তি আর বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটির আনন্দ শুধু তারাই জানে। আর তারা কারা? এ শহরেরই কিছু দ্বিচক্রযান পাগল!