স্টাফ রিপোর্টার:
বদলে গেছে দেশের সেই পুরনো ভূমি ব্যবস্থাপনা। ভূমি ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে আধুনিকতা। করা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। যা রীতিমতো অবিশ্বাস্যও বটে। পাঁচ বছর আগেও অনেকে বিশ্বাস করতেন না অনলাইনে কীভাবে জমির খাজনা (যা সরকারি ভাষায় ভূমি উন্নয়ন কর নামে পরিচিত) পরিশোধ করা সম্ভব? একইভাবে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে না গিয়ে ভূমি অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন ছাড়া জমির নামজারি করা কীভাবে সম্ভব? আসলেই এখন এসব সম্ভব।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা আনতে ও জাল-জালিয়াতি রোধে জমির খতিয়ানের সঙ্গে পার্সেল ম্যাপ সংযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এ জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে ভূমি অটোমেশন প্রকল্পে ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা সংযুক্ত করারও নির্দেশ দেন। পার্সেল ম্যাপ হচ্ছে- অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ সংযুক্ত করে দাগ ভিত্তিক ভূ-সম্পদ ম্যাপ। গত ২৪ আগস্ট ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় ভূমিমন্ত্রী প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে সারা দেশে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থায় পর্যায়ক্রমে ম্যানুয়াল দাখিলা দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থার বিধি-বিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন যে কেউ চাইলেই আর ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে জমির খাজনা দিতে পারবেন না। জমির মালিক দেশে বিদেশে যেখানেই অবস্থান করুক সেখানে বসেই কোনও প্রকার হয়রানি বা দালালদের খপ্পড়ে না পড়েই জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারছেন।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমি কর সেবা অনলাইনে এসেছে ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর। সে দিন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘অনলাইন ভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার পাইলটিং (১ম পর্যায়)’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ সেবা পেতে প্রথমে সেবাপ্রার্থীকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন অনুমোদনের পর মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে কর পরিশোধ করা যায়। এ জন্য এখন আর সেবাপ্রার্থীদের ভূমি অফিসে ছোটাছুটি করতে হয় না। কর আদায়ের এই পুরো পদ্ধতিটিই অনলাইনের আওতায় চলে এসেছে। ভূমি অফিসগুলোতে এখন আর নগদ টাকা লেনদেন হয় না। অবশ্য পার্বত্য তিন জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে এ সেবা পেতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য সার্ভার জটিলতার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের। ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, এই জটিলতাও থাকবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাইজড পরিবর্তন মানুষের হয়রানি কমিয়েছে। ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে এনেছে স্বচ্ছতা, বাড়িয়েছে উদ্দম। ফলে অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় বেড়েছে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের পরিমাণ। এখন যে কেউ দেশে বিদেশে অবস্থানকালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের মালিকানাধীন জমির সর্বশেষ আপডেট জানতে পারছেন। সারতে পারছেন যেকোনও জটিলতা। পরিশোধ করতে পারছেন বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে জমির খাজনা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক এবং শুধুমাত্র অনলাইনেই জমির খাজনা দেওয়ার উপায় রয়েছে। তাই জমির খাজনা পরিশোধ করতে অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে আগে জানতে হবে। দেশে বসবাসকৃত প্রতিটি নাগরিকেরই তাদের মালিকানা অনুযায়ী জমির রাজস্ব আদায় করতে হয়। জমির খাজনা পরিশোধ না করলে সে জমির ভোগ দখলের ক্ষেত্রে সমস্যা হলে পরবর্তীতে সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায় না। এছাড়াও জমির খাজনা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। বাংলাদেশ ভূমি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বর্তমানে অনলাইনে জমির খাজনা দিতে হবে বলে ঘোষণা করেছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগে এক সময় জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য উপজেলা ভূমি অফিসে অনেকগুলো কাগজপত্র নিয়ে সরাসরি উপস্থিত হতে হতো। বর্তমানে অল্প কিছু ডকুমেন্টস থাকলে নিজের মোবাইল দিয়ে ঘরে বসেই অনলাইনে জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা সম্ভব।
অনলাইনে জমির খাজনা দিতে যেসব ডকুমেন্টস লাগে সেগুলো হচ্ছে– জমির অবস্থান অনুযায়ী বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও মৌজার তথ্য, জমির খতিয়ান, পেমেন্ট পরিশোধ করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র। একটি অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম (বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, একপে, ডিবিবিএল)। একটি স্মার্টফোন, মোবাইল নম্বর ও ইন্টারনেট সংযোগ। অনলাইনে জমির খাজনা দেওয়ার জন্য ভূমি উন্নয়ন কর ওয়েবসাইটে ভিজিট করে নাগরিক কর্নার অপশনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এবার, পেমেন্ট করুন- অপশনে প্রবেশ করে জমির ঠিকানা দিয়ে তথ্য বের করে নিন। তারপর, এনআইডি যাচাই করলে কত টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে না দেখা যাবে। এবার, খতিয়ানের বিস্তারিত পেজে ‘অনলাইন পেমেন্ট’ অপশনে ক্লিক করে পেমেন্ট করতে পারবেন।
জানা গেছে, জমির খাজনা পরিশোধের পাশাপাশি আধুনিকায়ন করা হয়েছে রেকর্ড হালনাগাদ তথা নামজারি, রক্ষণাবেক্ষণ, ভূমি রাজস্ব আদায় ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কাজ। জরিপ পরিচালনা, জরিপ পরবর্তী স্বত্বলিপি বা রেকর্ড ও মৌজা ম্যাপ প্রণয়ন, সংরক্ষণ ও সরবরাহকরণ হচ্ছে সেটেলমেন্ট সংশ্লিষ্ট কাজ। আর জমির দলিলের নিবন্ধন ও সংরক্ষণ রেজিস্ট্রেশন সংশ্লিষ্ট কাজ। ডিজিটাল বাংলাদেশের আওতায় স্থাপিত সরকারের ডিজিটাল নাগরিক সেবা ইকোসিস্টেমে ভূমি মন্ত্রণালয় নাগরিক ভূমিসেবা অধিকতর কার্যকর ও দক্ষ করতে ম্যানেজমেন্ট, সেটেলমেন্ট এবং রেজিস্ট্রেশন-কার্যক্রমের ডিজিটাল সিস্টেম সিনক্রোনাইজ (সমলয়) করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।