স্টাফ রিপোর্টার:
বুধবার কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভা হয়েছে। সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই সভায় ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা তাদের বক্তব্য ও নানা দাবি তুলে ধরেন। সভার সভাপতি শেখ হাসিনা মনোযোগ দিয়ে তাদের বক্তব্য শোনেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ১৪ দলের নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন। তারা আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জোটবদ্ধভাবে করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি দুর্নীতির লাগাম টেনে, দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে ১৪ দলের নেতা ও সাম্যবাদী দলের (এম.এল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, বৈঠকে যথারীতি ১৪ দলের নানা কর্মকাণ্ড ও আগামী দিনের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনে জোটবদ্ধ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যথাসময়ে যাতে নির্বাচন হয়, শাসনতন্ত্রের ধারা যেন অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, মাদক ও দুর্নীতি কমিয়ে আনাসহ সমসাময়িক বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। এগুলো মোকাবিলা করে কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, এসব বিষয়ে আমাদের অনেকে কথা বলেছেন।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল আদর্শ থেকে জাতিকে বিচ্যুত করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। চক্রান্তকারীরা অপশক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ উৎসাহিত করছে। একটি চিহ্নিত মহল দেশের সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে ব্যাহত করা। পাশাপাশি চক্রান্তকারীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
সভার প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রীয় ১৪ দল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কোনো প্রকার অসাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট কখনো আপস করবে না। কেন্দ্রীয় ১৪ দল রাজপথে থেকে সব ধরনের অপশক্তি মোকাবিলা করবে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোটগতভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সমাজের সবদিকে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এখন মোটামুটিভাবে এমন জায়গায় আছি, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক চাপটা আছে, ডলারের ক্রাইসিস এটাতো সারা বিশ্বব্যাপী, আমাদেরও ওপরও আছে। তারপরও আমি বলবো আমাদের অর্থনীতি গতিশীল আছে। এবারও আমরা ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ, এখন আমরা ঘোষণা দিয়েছি স্মার্ট বাংলাদেশ করবো।
গ্রামে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হয়তো ঢাকা শহর সবাই দেখেন, গ্রামের দিকে যাননি। গ্রামের মানুষ, গ্রামে কিন্তু কোনো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নেই। আজকেও আমি খবর নিলাম বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা এসেছিলেন, জিজ্ঞেস করলাম কী অবস্থা। তারা বলেন এখানে দাম বেশি, আমাদের ওখানে সব ঠিক আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেটাও কার্যকর করতে হবে। সেখানে কিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের আসবে। সে প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের (এম.এল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, ন্যাপের সভাপতি আইভী আহমেদ, গণ-আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ড. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ।