মোস্টবেট বাংলাদেশের সেরা বুকমেকার। স্পোর্টস বেটিং, অনলাইন ক্যাসিনো সকলের জন্য সীমাবদ্ধতা ছাড়াই উপলব্ধ, এবং একটি ব্যাঙ্ক কার্ডে Mostbet withdrawal সম্ভব!
Türkiye'nin en iyi bahis şirketi Mostbet'tir: https://mostbet.info.tr/

বাংলাদেশ, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা ও প্রতিকার


প্রকাশের সময় :১৭ জুন, ২০২৩ ১:৩৭ : অপরাহ্ণ

কামরুন নাহার পারভীন:

জলাবদ্ধতা, সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়া, বৃষ্টি-পরবর্তী দ্রুত সময়ে অপসারিত না হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া, খাল-নদীর গতিপথ পরিবর্তন, স্থল ও জলভাগের জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ইত্যাদির জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণের পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণও সমভাবে দায়ী।

মাটি, পানি, বায়ু মিলে আমাদের পরিবেশ। এই পরিবেশে বেঁচে থাকে প্রাকৃতিক সৃষ্ট প্রাণী, উদ্ভিদ ও মানবজাতি। এই তিন সৃষ্টির মধ্যে মানবজাতি সেরা সৃষ্টি। পৃথিবীকে বর্ণিল করতে নানাভাবে প্রকৃতি আর পরিবেশের শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতিই প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করার খেলায় মত্ত।

পরিবেশ বিপর্যয় ধীরে ধীরে মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জলে-স্থলে বিচরণকারী মানবকুল নগরসভ্যতা আর আধুনিকায়নের কারণে ধ্বংস করছে সবুজ প্রকৃতি। ফলে প্রাণিকুলের স্বাভাবিক বিচরণ ক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার প্রজাতির গাছ, লতা, গুল্ম। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক পশু, পাখি, মাছসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় প্লাস্টিক দূষণ। নিত্যপণ্য, খাবারদাবার প্যাকেজিং থেকে শুরু করে শিক্ষা উপকরণ, গৃহস্থালির তৈজসপত্র, অবকাঠামো নির্মাণ, হাল ফ্যাশনের আসবাবপত্রেও প্লাস্টিক পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বেড়ে গেছে।

আধুনিকায়নের কারণে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন হবে, চাহিদা অনুযায়ী জোগান হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে সবকিছু যৌক্তিক। কিন্তু এসব জিনিস ব্যবহার-পরবর্তী নষ্ট হলে এটা ফেলে দেওয়ার যে প্রক্রিয়ায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি তার কুফল নানাভাবে ভোগ করার পরও আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না।

একজন মানুষ হিসেবে সংসার, সমাজের প্রতি আমাদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনি করে একজন নাগরিক হিসেবেও দায়িত্ব রয়েছে।

আমরা সভ্য বলে দাবি করি। আসলেই কি আমরা সভ্য? যেখানে-সেখানে অপচনশীল আবর্জনা বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য, পলিথিন ফেলে আমরা পুরো শহর ও গ্রামের ড্রেন, খাল, বিল, নদী, নালাকে ভরাট করে ফেলছি। পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ড্রেনেজ সিস্টেম প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে ব্লক হয়ে যাচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা, নদী ভরাট, মাটির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। মাছ প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে মারা যায়। খাল, নদী, সাগরে প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে জলজ প্রাণীদের বিচরণ ক্ষেত্র সীমিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের প্রজননক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে। প্রাকৃতিক খাবারের উৎস নষ্ট হওয়ার কারণে জলজ ও স্থলজ প্রাণিকুল ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে।

এই অপরিণামদর্শী কাজের প্রভাব পড়ছে আবহাওয়া ও জলবায়ুতে। প্রকৃতি থেকে আমরা বৈরী আচরণ পাচ্ছি। ভরপুর বর্ষায় কাটফাটা রোদ, খরা, শীতের সময় গরম, মাত্রাতিরিক্ত তুষারপাত জানান দিচ্ছে পৃথিবী ভালো নেই। গ্রিন হাউস অ্যাফেক্টের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে প্রকৃতির এসব বৈরিতা আমাদের জন্য অশনিসংকেত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৫০ বছরে সমৃদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ফুট বাড়লে, বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। উদ্যোগ নেওয়ার সময় এখনই। আসুন সবাই সচেতন হই। আমাদের এই সুন্দর দেশ তথা এই ধরণীর প্রকৃতি ও পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের উচিত পলিথিন ব্যবহার না করে পাট বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করা, গৃহস্থালি কাজে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার না করে মাটি, বাঁশের পণ্য ব্যবহার করা, গৃহস্থালি পচনশীল বর্জ্য ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করে রাখা, চিপস, বিস্কুট, চকোলেট, আইসক্রিমের প্যাকেট যেখানে-সেখানে নিজেও না ফেলা পাশাপাশি শিশুদের এই বিষয়ে উৎসাহিত করা, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য সাধারণ ময়লার মতো না ফেলে এটা নির্ধারিত নিয়মে পুড়িয়ে ফেলা,পাট জাতীয় পণ্য ও মাটির তৈরি পণ্য নিয়ে ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করা, গৃহস্থালী ও ব্যবসায়িক বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলা, পাট, বাঁশ ও মাটি দিয়ে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন পণ্য তৈরি ও বিপণন করা।

জনগণের পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করাটাও জরুরি। যেমন-৫৫ মাইক্রন পুরুত্বের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের আইন রয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন, প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যায় পরিবেশ সচেতনতা বিশেষ করে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা এবং পরিবেশবান্ধব উপাদান যেমন-পাট, বাঁশ, মাটির জিনিসপত্র ব্যবহারের সুবিধাজনক দিক অন্তর্ভুক্ত করা, পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরিতে বর্তমান প্রজন্মকে উৎসাহিত করা, পাট, বাঁশ ও মাটির তৈরি পণ্য যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের দেশের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া, প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাট, বাঁশ ও মাটির পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, পাট, বাঁশ ও মাটির পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি করা, বারোমাসি পাটের জাত আবিষ্কার করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা; প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা, পাট, বাঁশ ও মাটির তৈরি পণ্যের উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃত করা, প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের ওপর অত্যাধিক শুল্কারোপ করে পাট, বাঁশ, মাটির তৈরি জিনিসের মূল্য কমিয়ে পাটজাত পণ্যকে আরও সহজলভ্য করে তোলা, নতুন করে কোনো প্লাস্টিক কারখানা স্থাপনের অনুমোদন না দেওয়া, পরিবেশবান্ধব গাছ লাগাতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা, বনাঞ্চলের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি এর বর্ধিতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা।

ট্যাগ :