মাঈন উদ্দীন রুবেলঃ
শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন যাবৎ সূর্যের দেখা মিলছে না,কুয়াশাচ্ছন্ন ও সূর্যবিহীন দিন যাচ্ছে। সূর্যের দেখা না পাওয়ায় প্রচন্ড ঠান্ডায় লোকজন ও পথশিশুরা শুকনো কাঠ, ঘাস ও শুকনো ময়লা আবর্জনা স্তূপে আগুন জ্বালিয়ে শরীরে তাপ নেয়। শীতের এমন সময়ে কনকনে শীতে শীতবস্ত্রহীন অসহায় লোকজন ফুটপাতে রাত যাপন করা লোকজন এবং পথশিশুরা তরতর করে কাঁপতে শরু করে। এমন দৃশ্য খবরের কাগজ ও টিভির পর্দায় দেখতে পাওয়া যায়। শীত আসে ধনীদের জন্য খুশির বার্তা নিয়ে আর অসহায় গরীব ও পথশিশুদের জন্য আসে দূঃখ হয়ে। কারণ শীতের দিন ঘুম ভালো হয়,তা যদি হয় ধনী লোকদের জন্য তাহলে আরো আরামদায়ক যেহেতু তারা দামি দামি লেপ ও কম্বলের মধ্যে ঘুমায় এতে শীত তাদের তেমন স্পর্শ করতে পারে না। কিন্তু অসহায় গরীব-দুঃখী, পথশিশুদের জন্য চরম কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। কারণ দামি শীতবস্ত্র, লেপ-কম্বল কেনার সেই সামর্থ্য তাদের থাকেনা। পথশিশুরা ও ফুটপাতে জীবন অতিবাহিত করা লোকজনের শরীর ঢাকার মত পোশাক পর্যন্ত থাকেনা। এমনকি দু’মুটো ভাত পর্যন্ত জোটে না। কারণ প্রচন্ড ঠান্ডায় তারা ভীক্ষায় ও বের হতে পারে না। কোন এক উষ্ণ জায়গায় কুঁজো দিয়ে দিনরাত পার করে যায়। বৃদ্ধরা ঠান্ডায় কাতরায়। তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে এমনকি তীব্র ঠাণ্ডায় অনেকে মারাও যায়। এমতা অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আমাদের আঞ্চলিক কিছু কথা আছে, “পৌষের শীতে ভূত কাপে আর মাঘের শীতে বাঘ ডোরে”(গর্জন)। পৌষ গেল, মাঘ আইল শীতে কাঁপে বুক/দুঃখীর না পোহায় রাতি হইল বড় দুখ।’ গ্রামবাংলার এ কথাগুলোর মাধ্যমে আমাদের দেশের অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের শীতকালীন দৃশ্য ফুটে উঠে । সৃষ্টিকর্তার অপার ইচ্ছায় ও প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতুর পালাবদল ঘটে। এই পালা বদলের হাত ধরেই চলে আসে শীত। শীত আসে শীত যায় এটা স্রষ্টা প্রদত্ত প্রকৃতির নিয়ম যা ঋতুর চক্রাকারে হতে থাকে। তাই দেশের গরীব দুঃখী অসহায় মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণে মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফুটানো ও শীত থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদের শীতার্ত মানুষদের পাশে দাড়াতে হবে। বিশেষ করে আমাদের নজর দিতে হবে ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষ, শিশু ও বয়স্কদের প্রতি। মানবতার পাশে দাড়ানোই হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ। যা একজন মানুষকে উদার ও বড় করে তোলে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তাই গরিব-অসহায়, দুস্থের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা প্রদর্শন ও সহানুভূতিশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। সব মানুষের উচিত সমগ্র সৃষ্টির প্রতি দয়া-মায়া, অকৃত্রিম ভালোবাসা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহানুভূতি বজায় রাখা। তাই দেশের সর্বস্তরের ধনাঢ্য, বিত্তবান, শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি, আপনারা চলতি শীত মৌসুমে শীতার্ত গরিব, অসহায়, দুঃখী মানুষকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পাড়া-মহল্লায় নতুন বা পুরোনো কিছু শীতবস্ত্র বিতরণে অকাতরে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করুন। আর সমাজের সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীরা এ সকল শীতার্ত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করলেই এ থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র সরবরাহ করে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে এসে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে এলেই শীত নিবারণের পাশাপাশি তাদের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব।
আসুন, আমরা সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই। এটি আমাদের মানবিক দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ববোধই হতে পারে অসহায়ের সহায়।