স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাবা আমাদের কাছে বটবৃক্ষের মতো। বাবা সবসময় সন্তানদের আগলে রাখেন পরম যত্নে। বাবার মৃত্যু মানে সন্তানদের জন্য পরম শোকের। বাবার মৃত্যুর পর সন্তানরা অঝোরে কাঁদবে। পরম যত্নে বাবাকে দাফন করবে। এটাই আমাদের সমাজের স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ঘটেছে অদ্ভুত কাণ্ড। অভাগা বাবার মৃত্যুর পর ছেলেমেয়েদের শোক প্রকাশ তো দূরে থাক, সময়মতো হয়নি দাফনের কাজও।
এমন ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়ি এলাকায়। অবসরের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে রেখে শনিবার রাত থেকে বাবা মনির আহমেদের (৬৫) লাশ সড়কে ফেলে বিরোধে জড়ায় সন্তানরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্স এনে করা হয় লাশ রাখার ব্যবস্থা। রোববার (২৫ ডিসেম্বর) বিকাল পাঁচটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার লাশ দাফন হয়নি।
ঘটনাস্থলে কর্ণফুলী থানা পুলিশের সদস্যরা ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন। সন্তানদের এমন কীর্তিতে হতবাক হয়ে গেছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
মৃত মনির আহমদের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (৪০) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার পিতা পদ্মা অয়েল কোম্পানীতে চাকরি করতেন। অবসরে এসে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হন। আমার মেজো বোন বেবি আকতার আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এবি ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা তুলে পেলেন। আমার ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী আলমগীর দেশে আসার জন্য রওনা হয়েছে। সে আসার পর টাকার সমঝোতার পর বাবার দাফন করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, মনির আহমদের অবসরের টাকা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে মেজো মেয়ে বেবি আকতারের সঙ্গে অন্য ভাইবোনদের বিরোধ চলছিল। শনিবার মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে রোববার সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ মান্যগণ্য ব্যক্তিগণ সামাজিক বৈঠকও হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মারা যাওয়ার পর শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে এনে লাশ রেখে দেন বাড়ির পাশের সড়কে। সকাল থেকে অবসরে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাইফুদ্দিন বলেন, মনির আহমদের অবসরের টাকা ব্যাংক উঠিয়ে ফেলার অভিযোগ এনে ভাইবোনের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। লাশ এখনও পর্যন্ত সড়কে রয়েছে।
তবে বেবি আকতার অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, আমার পিতার অবসরের কোনো টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করিনি। তাদের অভিযোগগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট।
মনির আহমদের ছোট মেয়ে লিপি আকতার জানান, আমার পিতা ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আমরা তিন বোনেরা মিলে বাবার চিকিৎসা খরচ বহন করছি। এক ভাইও কোনো সহযোগিতা করেনি। অবসরের টাকার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। গতকাল বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে অবসরের টাকার বিষয় তুলে বাবার লাশ দাফন করতে দিচ্ছে না।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছে। পিতার অবসরের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।