স্টাফ রিপোর্টারঃ
অসুস্থতা নিয়ে দুইদিন আগে চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৩ বছর বয়সী ফরহাদুল ইসলাম। জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক জানান, ফরহাদুলের অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন করতে হবে। অপারেশনের আগে রোগ নির্ণয়ের জন্য টাকাও আদায় করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তির পর ঘণ্টা দুয়েক পার হয়ে গেলেও ফরহাদুলের অপারেশন করেনি পার্কভিউ হাসপাতাল। কি কারণে অপরাশেন হচ্ছে না তা জানতে চান ফরহাদুলের স্বজন কামরুজ্জামান। তখন হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, সার্জারি চিকিৎসক আসেননি। আবার রোগীর আশঙ্কাজনক অবস্থার দায় নেওয়া হবে না বলেও জানান তারা। বাধ্য হয়ে রিলিজ নিয়ে ততক্ষণে অন্য হাসপাতালে নেওয়া হয় ফরহাদুলকে।
পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তির পর রিলিজ নেওয়া পর্যন্ত চার ঘন্টায় বিল আসে ১২ হাজার ৮২৩ টাকা। পরে সেখান থেকে ১৩’শ টাকা ছাড় (ডিসকাউন্ট) দিয়ে সাড়ে ১১ হাজার টাকা পরিশোধ করেন রোগীর স্বজন কামরুজ্জামান। পরবর্তীতে জানা যায়, কোনো ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই টাকা আদায় করেছে পার্কভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে–সেই টাকা ফেরত চাইতে গিয়েও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে এই হাসপাতালটির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তবে– ঘটনাকে বাড়িয়ে রোগীর স্বজন মিথ্যাচার করছেন বলে দাবিও করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও আদায় করা বাড়তি টাকা এখন পর্যন্ত রোগীকে ফেরত দেয়নি পার্কভিউ কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজন মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, সেখান থেকে চলে আসার পর হাসপাতালের একজন ওয়ার্ডবয় আমাকে কল করে বিল বেশি আদায় করা হয়েছে বলে জানায়। টেস্ট না করেই আমার কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে এ টাকা ফেরত চাইলে হিসাব বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
আদায় করা বাড়তি টাকা ফেরত পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে কামরুজ্জামান বলেন, না, এখনো পর্যন্ত টাকাটা তারা আমাদের ফেরত দেয় নাই। ওখানকার কেউ একজন ফোন দিলে আমি টাকাটা আনবো। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা কেউ আমাকে ফোন দেয় নাই। আমি আজকের দিন ওয়েট (অপেক্ষা) করবো, যদি ফোন না আসে তাহলে আগামীকাল সকালে ভোক্তা অধিদপ্তরে মামলা করবো।
হাসপাতালের দাবি তারাই আপনাকে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানিয়েছেন এমন প্রশ্নে কামরুজ্জামান বলেন, না, ইটস নট লাইক দ্যাট। আমি তো নরমাল একটা মানুষ। উনারা যদি আমাকে ইনর্ফম করে থাকে প্রুফ দেখাক। আজকাল তো ডিজিটাল যুগ সবই বের করা যায়। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে অফিশিয়াল বা আনঅফিশিয়াল কোনোভাবেই ফোন দিয়ে আমাকে কিছুই জানায় নাই। ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা টাকা নেওয়ার জন্যও বলে নাই।
এই বিষয়ে জানার জন্য পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফের মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি ।
উল্লেখ্য– করোনাকালে মো. সেলিম নামের এক করোনা রোগী ভর্তির ১৩ দিনে পার্কভিউ হাসপাতাল বিল করে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৫১৯ টাকা। সেই হিসেবে একদিনে করোনা রোগীর বিল এসেছে ৫৩ হাজার ৬৫৫ টাকা। ১ লাখের বেশি মেডিসিন বিল ধরা হয়েছে। অথচ রোগীর পরিবার সমস্ত ওষুধ সরবরাহ করেছে বলে দাবি করেছে। গত ১৭ জুলাই মো. সেলিমের মৃত্যু হয়। যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল।
তখনকার স্বজনদের দেওয়া বিল থেকে জানা যায়, চিকিৎসার জন্য যে বিল দেখিয়েছে পার্কভিউ হাসপাতাল তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। বিলে একেক অংকে অক্সিজেন, কনসালটেন্ট ও সার্ভিস চার্জ দুই বার ধরা হয়েছে। অক্সিজেন বিল একটা হলো ৭৭ হাজার ৮০০ ও আরেকটি ১ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা।
একইভাবে কনসালটেন্ট ফি এক জায়গায় ধরেছে ১৮ হাজার টাকা, আবার ডাক্তার বাসা থেকে ওদের সাথে কথা বলার কারণে হোম কনসালটেন্ট ফি ধরেছে ২৮ হাজার টাকা। সার্ভিস চার্জ এক জায়গায় ৩৪ হাজার ২০০ টাকা ধরেছে। আবার ১ লাখ ১৬ হাজার ২৫৩ টাকা সাভিস চার্জ ধরেছে এই পার্কভিউ হাসপাতাল।
কথিত আছে করোনাকালে চট্টগ্রামের এই বেসরকারি হাসপাতালটি করোনা রোগীদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করেছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। যা সাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অগোচরে থেকে গেছে।
আগামী পর্বে পার্কভিউ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জিম্মি করে অধিক বিল আদায় করার কয়েকজন ভুক্তভোগীর তথ্যসহ রিপোর্ট উপস্থাপন করা হবে।