স্টাফ রিপোর্টারঃ
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের বেশ কিছু পাহাড় দখল করে নিজের অপরাধের স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছিল স্থানীয় সন্ত্রাসী ইয়াছিন। সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই আলীনগর পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হন সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ। এরপরই টনক নড়ে প্রশাসনের। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়খেকো ও পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। এ সময় সাতটি ড্রাম ট্রাক ও তিনটি স্কেভেটর জব্দ করে পুলিশ।
এদিন জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অংশগ্রহণ করে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল মামুন, সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলমসহ পুলিশ ও র্যাবের শতাধিক ফোর্স ।
এর আগে, গত ১৫ জুলাই শুক্রবার স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ আলীনগর পরিদর্শনে যান।
পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে চেয়ারম্যানের গাড়ি থেকে নামিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আরিফকে বেধড়ক মারধর করে ইয়াসিন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এ সময় সবার সামনে মেম্বার আরিফের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে তারা। এ ঘটনায় আরিফ মেম্বারের ছোট ভাই আবদুল আলীম বাদী হয়ে ইয়াসিন, ফারুকসহ ৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। এরপরই সোমবার দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থেকে ডিবি পুলিশের সহায়তায় ইয়াসিনকে গ্রেফতার করে পুলিশের একটি দল।
সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে জনপ্রতিনিধিকে মারার ঘটনার পরই আলোচনায় আসে মোহাম্মদ ইয়াসিন ও জঙ্গল সলিমপুর।
অভিযান প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক কর্তৃক জঙ্গল সলিমপুরকে ঘিরে নেওয়া মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আজকের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আজকের অভিযানের মাধ্যমে সরকার বার্তা দিতে চায়, প্রশাসনের চেয়ে ক্ষমতাধর কেউ নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন জানান, জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ের বেশকিছু পাহাড় দখল করে নিজের অপরাধের স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছিল সন্ত্রাসী ইয়াছিন। জঙ্গল সলিমপুর, আলী নগরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে আজকের অভিযান বিভিন্ন আঙ্গিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নয়- এ মেসেজটি আমরা সব দুষ্কৃতকারীকে দিতে চাই। সীতাকুণ্ডের মাটিতে কেউ অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলবে তা আমরা হতে দেব না।
তিনি আরও জানান, সরকার জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছে। শিগগিরই উচ্ছেদসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হবে। পাশাপাশি প্রকৃত ভূমিহীদের পুনর্বাসন করা হবে।