পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ
পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত অষ্টম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেতুর মূল কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের পরিচ্ছন্নতা ও রংয়ের কাজ। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় এ সেতুটি। সেতুটি চালু হলে এ অঞ্চলের ১৮টি জেলার কয়েক কোটি মানুষের অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। পাশাপাশি দক্ষিণের যোগাযোগ খাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এ সেতু।
খুলনা টু বরিশাল রুট এবং পিরোজপুরের আন্তঃজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে তরান্বিত করতে জেলা সদরের কুমিরমারা ও কাউখালী প্রান্তর বেকুটিয়ায় পয়েন্টে নির্মিত হয়েছে অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। ২০১৭ সালের ১ অক্টোবরে শুরু হয় সেতুটির নির্মাণ কাজ। সেতু চালু হলে বরিশালের সঙ্গে খুলনার নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনসহ কুয়াকাটা সমদ্র সৈকত, পায়রা ও মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরকে সেতুটি সরাসরি সড়ক সংযুক্ত করবে।
সেতু দেখতে আসা যুবক ফরহাদ মনসুর বলেন, পিরোজপুরে আমাদের বিনোদন কেন্দ্র বলতে তেমন কিছু নেই। বেশির ভাগ সময় নদীর পাড়ে অথবা বলেরশ্বর ব্রিজে সময় কাটাই। তবে নতুন সেতুটি অনেক বড় এবং সুন্দর হওয়ায় আমাদের আগ্রহ এবং ভালো লাগা এটা। তাই সময় পেলেই বাইক নিয়ে বন্ধুরা মিলে ঘুরতে আসি নতুন নির্মিত সেতুর কাছে। এ অঞ্চলের সব থেকে বড় সেতু এটি। ভালোই লাগে পরিবেশটা।
পিরোজপুর বেকুটিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন বাসিন্দা মালেক মিয়া বলেন, আমি একটি বেসরকারি ব্যাংকে জব করি। প্রতি সপ্তাহে প্রতি সপ্তাহে ছুটিতে বাড়ি আসতে হলে ফেরির জন্য প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এখন মুহূর্তেই পার হতে পারবো। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীব বলেন, এ সেতুটি চালু হলে পাল্টে যাবে এ জেলার যোগাযোগ ও অর্থনীতির চিত্র। এ সেতু নির্মাণের ফলে উন্নয়ন যাত্রায় অনেকটাই এগিয়ে যাবে পিরোজপুর বাসী তথা দক্ষিণাঞ্চল।
অষ্টম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, চীন সরকারের সহযোগীতায় নির্মিত ৯৯৮ মিটার দীর্ঘ ও ১৩.৪০ মিটার প্রস্থ অষ্টম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতুটি নির্মাণে খরচ হয় ৮০৯ কোটি টাকা। সেতুটিতে রয়েছে ১০টি পিয়ার, ৯টি স্প্যান ও গার্ডার এবং ১৫টি ভায়া ডেক।
তিনি আরো জানান, জুন মাসেই চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর আগামী এক মাসের মধ্যে সেতুটি উদ্বোধন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
পিরোজপুরের ডিসি মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, সেতুটি চালু হলে সব থেকে বেশি উন্নতি হবে জেলার কৃষি ও মৎস্য পণ্যের। কারণ এ জেলার ৬০ ভাগ মানুষ কৃষি ও মৎস্য পণ্যের সঙ্গে জড়িত। এতোদিন যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ না থাকায় সময় মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারেননি তারা। তাই তাদের লাভ কম হয়ে থাকে। তবে সেই দিনগুলো পাল্টে যাবে সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গে। খুব কম সময়ে পৌঁছে যাবে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের পণ্য আর আগের থেকে ভালোই লাভবান হবেন তারা।