স্টাফ রিপোর্টারঃ
আইন কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি মামলা এখন থেকে গ্রহণযোগ্য হবে না। মামলা হবার সঙ্গে সঙ্গে কাউকে গ্রেফতার না করে আগে অভিযোগটি ওই আইনে দায়ের করা যায় কি না- তা যাচাই করে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি আরও জানান, ধর্ষণ মামলায় কোনো নারীকে চরিত্র নিয়ে জেরা করার উপধারা বাতিলের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া আইনমন্ত্রী মামলাজট কমিয়ে আনতে বারবার সময় চেয়ে আবেদন না করতে আইনজীবীদের প্রতি আহবানও জানিয়েছেন।
শনিবার, রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) ও পাবলিক প্রসিকিউটরদের (পিপি) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা জানান।
সরকারের হিসাব বলছে সারাদেশে ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন। যার মধ্যে ৩৫ লাখ মামলা বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। ৫০ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় কোন কোন মামলা। দুই বছরের করোনা মহামারী মামলার জটকে আরো জটিল করেছে।
বিচারক আদালতের আইন কর্মকর্তাদের সাথে মত বিনিময়ে আইনজীবী ও বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন সংশোধনের পরামর্শ দেন আইন কর্মকর্তারা।
এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যেসব মামলা আপোষের মাধ্যমে মীমাংসা সম্ভব সেগুলো আদালতের বাইরে নিস্পত্তি করলে জট কমবে। মাদকসেবীর বদলে মাদক করবারীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও জট কমবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, আগে বলা হতো সিভিল কেস বেগুন খেতের মতো। এটা প্রচলিত ছিল। আমি তো শুনে শুনে বড় হয়েছি। এই জিনিসটা পরিবর্তন করতে হবে। জনগণ সময়মত বিচার না পেলে বিচার বিভাগের ওপর আস্থা হারাবে। তিনি বলেন, মামলা জট এখন কেবল আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মামলা জটের সমস্যা আছে। আমাদের এখানে ৪০ লাখের মত মামলা আছে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যার বিবেচনায় মামলার এই জট কিন্তু তত বলা যাবে না।
মন্ত্রী জানান, ধর্ষণ মামলায় নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিধান বাতিল হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কিছু অপব্যবহার হয়েছে স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, আইন কমকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া এই আইনে অভিযোগপত্র দেয়া যাবে না।
সরকারি আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আগে দেখবেন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আদৌ মামলা হয় কি না। তারপর সেটা বিবেচনা করবেন। এরপর আদালত যদি মনে করেন এটা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ, তাহলে সে রকম ব্যবস্থা নেবেন। আর যদি মনে করেন, সমন দিলেই যথেষ্ট, সমন দেবেন। তাই বলে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করে ফেলতে হবে, এটা সমর্থনযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করার পরে কিছু অপব্যবহার এবং অ্যাবিউজ যে হয়নি, তা তো নয়। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট করেছিলেন। এটা করেছিলেন একটা বিশেষ কারণে। তখন মানুষ খাদ্য মজুদ করত, স্মাগলিং করত। তখন প্রচলিত কাস্টমস আইনের স্মাগলিং ১৫৬ ধারা দিয়ে এই অপরাধ বন্ধ করা যাচ্ছিল না। স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্টের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয়েছে ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত।
আনিসুল হক বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে। সেসব সমস্যা হল সাইবার ক্রাইম। আমাদের এই সাইবার ক্রাইম মোকাবিলা করতে হবে।
দণ্ডবিধি অনুযায়ী অনেক অপরাধ আছে যেগুলো আর ফিজিক্যালি করা হয় না, কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়। সেটার বিচার করা হবে কীভাবে? সে জন্য তো একটা আইন করতে হবে। আমরা সে জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি বলে যোগ করেন আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বসেছেন এবং বলেছেন আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আগে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হতো। এখন এই আইনে মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে যাতে কাউকে অ্যারেস্ট না করা হয়।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে সভায় আট বিভাগের আটজন জিপি ও আটজন পিপি মামলাজট নিরসনের বিষয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।