স্টাফ রিপোর্টারঃ
করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখি
পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ করা হবে কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কয়েকদিন ধরেই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন তথ্য জানা যাচ্ছিলো। অবশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হচ্ছে না। যেভাবে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলো চলছিল, ঠিক সেভাবেই চলবে।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে গতকাল রবিবার রাতে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বৈঠকের আলোকে নেওয়া সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষামন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সময় আমাদের সংক্রমণের হার সাত শতাংশের কাছাকাছি ছিল। নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় এখনও আবার সেটা সাত শতাংশে পৌঁছেছে। তবে তখনকার তুলনায় এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। কারণ তখন ভ্যাকসিনেশন ছিল না, অর্থাৎ তখন কোনও শিক্ষার্থী টিকা নেয়নি। এখন শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ টিকা নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবাই সহ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের একটা বড় অংশ টিকা নিয়েছে এবং এই মাসের মধ্যে অন্তত এক ডোজ টিকার আওতায় সবাই চলে আসবে সকল শিক্ষার্থী। সেই পরিস্থিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করবো না।’
তবে করোনাপরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের টিকার কার্যক্রম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার যে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যতটুকু খবর পাচ্ছি, যতটুকু মনিটরিং করতে পারছি, তাতে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কাজ চলছে। সেটাকে আরও বেশি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এর আগে শুধু স্কুলগুলোতে মনিটরিং করা হতো, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাকীসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
শিক্ষার্থীদের টিকা পরিস্থিতির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৪৪ লাখ, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ শিক্ষার্থীকে। মোট টিকা দেওয়া হয়েছে ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ ডোজ। প্রথম ডোজ দেওয়া বাকি রয়েছে মোট ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী।
টিকার পরিকল্পনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যদি সব কিছু ঠিকভাবে চলে ৩৯৭টি উপজেলা বা থানায় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেওয়া শেষ করতে পারবো। তিনটি উপজেলা বা থানায় ১৭ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে পারবো। ৫৬টি উপজেলায় ২০ জানুয়ারির মধ্যে, ১৫টি উপজেলায় ২২ জানুয়ারির মধ্যে, ৩৫টি উপজেলায় ২৫ জানুয়ারি এবং সব শেষ ১১টি উপজেলায় ৩১ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেওয়া সম্পন্ন করতে পারবো। প্রথম ডোজ বাকি রয়েছে তাদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে পারবো।
জেলাওয়ারি শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি কোথাও কোথাও খুব ভালো হয়েছে, কোথাও ভালো হয়নি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ’যে টিকা ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে সব জায়গায় দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। সব জায়গায় দেওয়া যায় না। বিশেষ ব্যবস্থায় এই টিকা দিতে হয়।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে নিয়মিতই বৈঠক করবো। আগামী সাতদিন পরে এ বিষয়ে আবারও বসবো এবং নিয়মিতই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। যদি কোনও সময় মনে হয় বন্ধ করা দরকার, বন্ধ করে দেবো। তবে আমরা আশা করছি যে, এই পুরো টিকাদান কর্মসূচিটি ব্যাপক হারে ঘটলে তা আর প্রয়োজন হবে না।
সংবাদ সম্মলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক উপস্থিত ছিলেন।