স্টাফ রিপোর্টারঃ
সময় চলে গেলে ‘অতীত’ হয়ে যায়। অতীত মানে সুখের স্মৃতি, দুঃখের স্মৃতি। যোগ-বিয়োগের খেলা খেলতে খেলতে চলে গেল ২০২১ সাল। ৩১ ডিসেম্বর রাতে উৎসবে উৎসবে বরণ করা হচ্ছে নতুন ইংরেজি বছরকে, আর বিদায় জানানো হচ্ছে পুরনো বছরকে। সদ্য গত হওয়া বছরটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের অংশও ছিল বছরটি।
করোনাভাইরাস মহামারির ছায়াতেই বিশ্বজুড়ে এবারও কোটি কোটি মানুষ নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। দুই বছর আগে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে ২৮ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমন শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে আবার গত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে করোনার সংক্রমন বাড়ছে। ওমিক্রন নামে করোনার আরএকটি ধরণ ইতোমধ্যেই উদ্বেগ বাড়িয়ে চলছে। করোনা ডেলটা এবং ওমিক্রনের সংক্রমনের কারণে অনেক দেশ ইংরেজি নববর্ষের উৎসব বাতিল করছে।
ইংরেজি নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নির্দেশনায় থার্টি ফার্স্ট নাইটে ইংরেজি নববর্ষকে বরণ উপলক্ষে উন্মুক্ত স্থানে কোন অনুষ্ঠান না করার অনুরোধ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে সকল ধরণের অনুষ্ঠান সীমিত আকারে পালন করা হচ্ছে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে নির্ধারিত অনুষ্ঠানসমূহ উদ্যাপন করতে নগরবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। ঢাকা মহানগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলার স্বার্থে রাস্তার মোড়, ফ্লাইওভার, রাস্তায় এবং উন্মুক্ত স্থানে কোন ধরণের জমায়েত অথবা সমাবেশ বা উৎসব না করা এবং উন্মুক্ত স্থানে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোন ধরণের অনুষ্ঠান, সমাবেশ, নাচ, গান ও কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। কোথাও কোন ধরণের আতশবাজি বা পটকা ফোটানো যাবে না বলেও নির্দেশনায় বলা হয়।
‘খ্রিষ্টীয় নববর্ষ-২০২২’ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও ব্যবহারিক জীবনে খ্রিষ্টীয় বর্ষপঞ্জিকা বহুল ব্যবহৃত। খ্রিষ্টাব্দ তাই জাতীয় জীবনে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর নববর্ষকে বরণ করতে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বর্ণাঢ্য নানা আয়োজন করা হলেও করোনা মহামারির কারণে বিগত বছরের মতো এবারের উৎসবের আমেজও অনেকটাই ম্লান।
রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে তবে বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সতর্কতা প্রতিপালনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে একজনের আনন্দ যেন অন্যদের বিষাদের কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ এবং ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ বাঙালি জাতির জীবনে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান-২০২১ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০-দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করি, যেখানে সার্কভুক্ত ৫টি দেশের রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধানগণ সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানমালায় যোগ দিয়েছিলেন। তাছাড়া বিশ্বের ৭৭টি দেশের রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধানগণ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ ভিডিও বার্তা ও অভিনন্দন পত্র প্রেরণ করেছেন, যেখানে সকলেই আমাদের সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আমাদের সরকারের উদ্যোগে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরে জাতির পিতার নামে স্মারক ভাস্কর্য স্থাপন, সড়ক ও পার্কের নামকরণ করা হয়েছে। ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে সৃজনশীল অর্থনীতিতে আন্তজার্তিক পুরস্কার প্রবর্তন করেছে।’
নববর্ষ মানেই সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া। স্বভাবতই নতুন বছর নিয়ে এবারও মানুষের প্রত্যাশা একটি করোনা মুক্ত বিশ^। তবে, করোনার টিকা ছাড়াও অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনাসহ মানবসম্পদ তৈরির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হচ্ছে গতবছরের মত আগামী বছরের মোটা দাগের চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, এটাই নতুন ইংরেজি বছরে সবার প্রত্যাশা।