মোহাম্মদ জাবেদঃ
সমাজে প্রতিটি পেশারই স্বকীয় গুরুত্ব রয়েছে। একজন কৃষক যেমন দেশের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদনে কাজ করেন, একজন শিক্ষক যেমন সুশিক্ষিত জাতিগঠনে ভূমিকা রাখেন, একজন গৃহিণী যেমন ভবিষ্যত প্রজন্মকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেন, তেমনি প্রত্যেকেই তাদের নিজের কাজ ও অবদানের মাধ্যমে সমাজকে ও রাষ্ট্রকে সচল রাখে। বর্তমানের আধুনিক জাতি রাষ্ট্রভিত্তিক পৃথিবীতে রাজনৈতিক নেতারাই এমনিভাবেই আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মানে কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। কথায় আছে বীরের মৃত্যু নেই, বীর বেঁচে থাকে বীরত্বের গল্প কবিতায়। কল্যাণকামীর ভালোবাসা পাওয়ার মধ্য দিয়েই একজন সাধারণ মানুষ পরিণত হন গণমানুষের নেতায়। ভাষা, ভঙ্গি আর স্বভাবসুলভ উচ্চারণের মাধ্যমে মানুষের সুখ-দুঃখকে নিজের অনুভূতির সাথে এক সূতোয় বেঁধে যিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন। তিনি হলেন চট্টগ্রামের সিংহপুরুষ চট্টলবীর আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম, এক অদম্য রাজনীতিবিদের নাম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের সেই ছোট্ট বালকটি তার মেধা, শ্রম, ত্যাগের বিনিময়ে ধীরে ধীরে খেতাব পান চট্টলবীরের। সমাজ ও রাজনীতিতে সবাই নেতা বা নায়কের স্থান করে নিতে পারেন না। ইতিহাসে নায়ক হওয়ার মতো মানুষ সব কালে, সব যুগে সৃষ্টি হয়না। ইতিহাস আপন তাগিদে নায়কের উদ্ভব ঘটায়। চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তেমনি এক অবিসংবাদিত নেতা, যার সৃষ্টি ইতিহাসের প্রয়োজনে। যাকে আমি ভীষণ ভালোবাসতাম। তিনিও আমাকে খুব স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। শুধু আমাকে ভালোবাসতেন তা না, পরিবারের সব সদস্যের তিনি নিয়মিত খোঁজ খবরও নিতেন। আমি একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে তাঁর কাছে যাবার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সম্পর্কের সূত্রেই উনার বাসায় আমার যাওয়া আসা ছিল। এবং পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে বন্ধন হয়ে উঠেছিলো অটুট। তিনি আমাকে নিজের ছেলের মতো আদর স্নেহ করতেন সবসময়। আমিও তাকে নিজের অভিভাবক হিসেবে মেনে নিয়ে বাবার সম-আসনে বসেয়েছিলাম। আজকে আমার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা মূলত তারই অবদান বলা চলে।
চট্টগ্রামের কালজয়ী সিংহ পুরুষের মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ বারে বারে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে, তেমনি মনে পড়ে চট্টগ্রামের স্বার্থে দেশ-জাতির নানা সংকট-সম্ভাবনার সময়ে অসাধারণ কীর্তির কথা। ভুলতে পারবে না বীর চট্টলার জনসাধারণ। মেধা, প্রতিভা, সৃজনশীলতা, কর্ম উদ্দীপনা, অনমনীয় মনোবল, কর্মনিষ্ঠা ও অধ্যবসায় দ্বারা তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কালের পাতায় রেখে গেছেন চিরস্মরণীয় কর্মবাগান।
জেনেছি একাত্তরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন প্রয়াত এই নেতা। ছাত্র অবস্থায় রাজনীতি ও বিপ্লবে জড়িয়ে পড়েন। আন্দোলন ছিলো তাঁর শিরা-উপশিরায়। তার হাত ধরেই চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হয়েছে। তাই তাকে বলা হয় অবহেলিত চট্টগ্রামের কাণ্ডারি। বারবার আঘাত পেয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে পেয়েছিলেন ‘চট্টলবীর’ উপাধি।
তিনি চট্টগ্রামের মানুষকে ভালোবেসেছেন। চট্টগ্রাম স্বার্থ রক্ষায় তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। মেয়র থাকাকালীন ভোর বেলায় উঠে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতেন।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর একটি অনন্য গুণ ছিলো— তিনি বেওয়ারিশ, পচন ধরা লাশও নিজ হাতে গোসল ও সমাহিত করতেন। চট্টগ্রামের রাজনীতিকদের মধ্যে এ কাজটি শুধু তাকেই করতে দেখা যেতো। কতো অজানা বেওয়ারিশ লাশের দাফন কাপনের ব্যবস্থা করেছেন তা হিসেবের উর্ধ্বে। আলহাজ্ব মহিউদ্দিন চৌধুরী বেওয়ারিশ অনেক লাশ নিজ হাতে সমাহিত করে মানবসেবার অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ে একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গিয়েছিল তাকে।
আসলে আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মত রাজনীতিবিদদের আদর্শ, দর্শন, চেতনা ও সংগ্রামকে ধারণ করার মত যোগ্যতা খুব কম জনেরই আছে। উনার সত্যিকার রাজনৈতিক উত্তারাধিকার হওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় হবে। বহুমাত্রিক রাজনীতিক ও মেধাবী রাজনৈতিক কর্মী সৃষ্টির সৃজনশীল সুনিপুণ কারিগর ছিলেন তিনি। এই কিংবদন্তী নেতা আর কোনদিন আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন না। তাঁর জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জন্য আদর্শের পাঠশালা হয়ে থাকবে। কর্মবীর আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ও হাতে গড়া এক অনন্য উদাহরণ আজকের এই আধুনিক চট্টগ্রাম। আমি মন থেকে বিশ্বাস করি চট্টগ্রামের সকল স্থরের মানুষ কখনো রাজনৈতিক বৃত্তের উর্ধ্বে থাকা এই চট্টলবীরকে স্মৃতি থেকে দূরে রাখতে পারবে না। অনন্তকাল চট্টলাবাসীর হ্রদয়ের গহীনে লালিত থাকবে প্রিয় নেতা আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
আজকে আমার প্রাণপ্রিয় নেতা ও অবিভাবকের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। দেখতে দেখতে চোখের পলকে কেমন করে চারটি বছর পেরিয়ে গেছে ভাবতে চোখ জলে ভিজে আসে। আজকের এই দিনে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রিয় নেতার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার জীবনদর্শায় সকল ভূলক্রটি ক্ষমা করে জান্নাত নসিব করার ফরিয়াদ করছি। আমীন।
লেখকঃ মোহাম্মদ জাবেদ,
সদস্য-চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ,
কাউন্সিলর-২৩ নং উত্তর পাঠানটুলি ওয়ার্ড,
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।