এম.এইচ মুরাদঃ
জমে উঠেছে চট্টগ্রামের কাজির দৈউড়িস্থ আউটার স্টেডিয়ামে আয়োজিত মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শ্বশুর বাড়ির পিঠা’ নামের স্টলে নারী পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। মেলায় এমন ‘আনকমন’ নামের পিঠার দোকানে চেনা-অচেনা শীতকালীন পিঠাপুলির স্বাদ নিতে ভিড় করছে ক্রেতারা। কেউ আবার পার্সেল করে নিয়ে যাচ্ছে ঘরের জন্য। এভাবেই রকমারি পণ্য-মালামাল বেচাকেনায় বেশ সরগম হয়ে উঠেছে আউটার স্টেডিয়াম মাঠে শুরু হওয়া মাসব্যাপী ঐতিহ্যবাহী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। দীর্ঘদিন পর আবারো শুরু হয়েছে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের মেলা। হাসি ফুটেছে মেলাপ্রেমীদের মুখে। শুধু মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মুখেই নয়, হাসি ফুটেছে স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে এসে মেলায় অংশগ্রহণকারী দোকানিদের মুখেও। গেল বছর করোনার কারণে ২০২০ সালে হয়নি লালদিঘির জব্বারের বলীখেলার বৈশাখী মেলা, বিজয় মেলা ও এসএমই পণ্য মেলা। তাই এবার মেলা শুরু হতেই প্রথম থেকেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মেলা মানেই রং-বেরঙের জিনিসপত্রের সমাহার। মেলা বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য। এ মেলাগুলোতে বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি স্থান পায় নানারকম দেশীয় পণ্য। যেগুলো বহন করে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য। গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়- মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসছে অনেকে। দর্শনার্থীদের ভিড়ে চলার ‘জো’ নেই। মাটির তৈরি দেশীয় পণ্য, ঢাকাই, জামদানি, তাঁত, রেশম, পশমী, উলেরসহ দেশি পণ্যে সেজে উঠেছে মেলার মাঠ। পাশাপাশি গাছের টব. কসমেটিক্স, জুতা, শীতকালীন পোশাকসহ ঘর সাজানোর নানারকম পণ্যের দোকান রয়েছে। মেলার উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্টল। সেই দোকানগুলোতে নারীদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি গহনা, শাড়ির দোকানগুলোতেও নারীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। সন্ধ্যা নামতেই আরো মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে মেলায়।
মেলায় অংশগ্রহণকারী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা স্টল মালিকরা জানান, করোনায় আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। সারাবছর দেশের কোথাও না কোথাও মেলা হয়। আমরা ব্যবসায়ীরা সে মেলাগুলোতে অংশগ্রহণ করি। এভাবেই চলে আমাদের জীবন। কিন্তু করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মেলা। এ কারণে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
ফরিদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ি ফরিদ আহমদ বলেন, আমি মৃৎ শিল্পের কারিগর ও ব্যবসায়ী। দেশের যেখানেই মেলা হয় না কেন, আমরা সেখানেই অংশগ্রহণ করি। এ মেলাকে কেন্দ্র করে আমরা অনেক প্রস্তুতি নিই। গেল বছর মেলা হবে হবে ভেবে কিছু পণ্য তৈরি করেছি। কিন্তু মেলা হয়নি। অনেক লোকসান হয়েছে। আর্থিকভাবেও খুব সমস্যায় পড়েছি। এবার আশা করছি তা কাটিয়ে উঠতে পারবো। খুব খুশি লাগছে আবারো মেলা শুরু হওয়ায়। এছাড়া মানুষ আসছে মেলায়। দেশীয় শাড়ির দোকান ঢাকাই জামদানির শাড়ির দোকানে জামদানি শাড়ি ১৫শ’ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্যের রয়েছে। আবার মাটির পণ্যের দোকানে বেশ রং-বেরঙের মাটির পুতুল, তৈজসপত্র থালা বাটি, পানির মগ-গ্লাস, চা কাপ-প্রিজ, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, পিঠা বানানোর সাজসহ রয়েছে রকমারি জিনিসপত্র। এসব জিনিসগুলো ১০০ টাকা থেকে হাজারের উপরে বিক্রি হতে দেখা যায়। আরো আছে দা, বটি, পর্দা, বিছানা চাদর, বালিশ কভার, পাটিসহ কোকারিজের পণ্য। কসমেটিক্সের দোকানে বাহারি রঙ্গের হাতের চুড়ি, কানের দুল, ব্যাগ, জুতাসহ নানারকম পণ্য ও মেয়েদের থ্রি-পিসের সমাহার। আছে বাঁশ বেতের তৈরি চেয়ার, ঝুড়ি, রেক ও ফুলের দানি। এছাড়াও মেলায় বাহারি স্বাদের আচারের দোকানগুলোতে নারীদের বেশি ভিড়।
চট্টগ্রাম নগরীর জহুর হকার মার্কেটের ব্যবসায়ী জানে আলম জনি মেলায় ছোট বড় সবার জন্য স্যুট ও কোর্ট নিয়ে এসেছেন। তার দোকানের নাম উডল্যান্ড পার্ক। যেখানে রয়েছে ছোট বড় সবার জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের স্যুট ও কোর্ট। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার দোকানে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড়। বেচা-বিক্রি ভালো হওয়াতে এই ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
পরিবার নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসছেন বহদ্দারহাটের বাসিন্দা এসকান্দর মোহাম্মদ ফোরকান ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার। কথা হলে তারা বলেন, অনেকদিন পর মেলা হচ্ছে। করোনায় ঘর থেকে বাইর হতে পারিনি। অনেক কিছু কেনার আছে। মেলা থেকে কেনাকাটা করতে ভালো লাগে। তাই মেলায় চলে এসেছি। তারা বলেন, মাটির খুব সুন্দর সুন্দর জিনিস উঠেছে মেলায়। দেখে খুব ভালো লাগছে। তাই ঘর সাজানোর জন্য পানির মগ, থালা, বাটি কিনেছি। স্ত্রীর জন্য কিনেছেন তাঁতের একটি শাড়িও।
মেলায় আগত সাদিয়া আকতার বলেন, ঘর সাজানোর জন্য ফুলের টব ও কিছু সাজের জিনিস কিনেছি। তবে মেলায় কিছু জিনিসের দাম বাইরের মাকের্টের তুলনায় একটু বেশি। আমাদের মত মধ্যবিত্তের জন্য মেলার অনেক পণ্য কেনা কঠিন হয়ে গেছে। আশা করছি মেলায় শেষের দিকে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমবে।