স্টাফ রিপোর্টারঃ
পটিয়ায় ‘টিকা বাণিজ্যের’ ঘটনার বিষয়ে জানতে মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি। অনুমতি ছাড়া কিভাবে ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন হলো, যাদের টিকা দেয়া হয়েছে তাদের সকলের রেজিস্ট্রেশন ছিল কি-না এবং আর্থিক লেনদেন কিভাবে হয়েছে, এ তিন বিষয় খুঁজছেন তারা।
ইতোমধ্যে গতকাল দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অভিযুক্ত পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ঘটনার নথিপত্রও যাচাই বাছাই করেছেন। তদন্ত কমিটি ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিশ্বস্ত সূত্রে এসব জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গঠিত তদন্ত কমিটির তিন সদস্য আসেন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও অভিযুক্ত রবিউল হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল ২ হাজার ৬শ রেজিস্ট্রেশন কার্ড উপস্থাপন করলেও পরবর্তীতে কমিটি তা স্ক্যান করেন। যাতে ২ থেকে ৩শ কার্ড পুরানো এবং বাকি কার্ডগুলো টিকাদানের পরবর্তী সময়ের বলে জানা যায়।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খান বলেন, ‘এ সংক্রান্ত বিষয়ে কমিটি সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন। একই সাথে এ সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। যেহেতু এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা আরও অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন আছে। পুরো তদন্ত শেষেই এ বিষয়ে জানানো হবে।’
এর আগে গত ৩০ জুলাই ও ৩১ জুলাই সিনোফার্মের ভ্যাকসিন অন্যত্র নিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন লোকদের প্রদান করে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেন। তিন নিজ ইউনিয়ন পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডীতে আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয় ও শোভনদন্ডী স্কুল এন্ড কলেজে আওয়ামী লীগের ব্যানারে প্রায় চার হাজার মানুষকে টিকা দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। যার কোন অনুমতিই দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। তাছাড়া এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কিছুই জানতেন না খোদ স্বাস্থ্য বিভাগও। মূলত নিজের কাছে রক্ষিত থাকায় অননুমোদিতভাবে টিকা ভাগিয়ে এমন কর্মকান্ড ঘটান রবিউল।
ঘটনার বিষয় জানাজানি হলে গত শনিবার ৩১ জুলাই বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থো. সার্জারি) ডা. অজয় দাশকে সভাপতি, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খানকে সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নুরুল হায়দারকে সদস্য করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে তদন্ত কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন সুস্পষ্ট মতামত ও সুপারিশসহ দাখিল করতে বলা হয়। ইতোমধ্যে এক কার্যদিবস পেরিয়ে গেছে।
এদিকে, রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে উৎসবের আমেজে পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডীতে ‘টিকা বাণিজ্য’ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অগোচরে করোনার ভ্যাকসিন ভাগিয়ে নেয়ার ঘটনা খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যেই আলোচনা চলছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য সহকারী হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) পদে চলতি দায়িত্বে পদোন্নতি নেন রবিউল হোসেন। ২০১২ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকেই পটিয়া উপজেলাতেই কর্মরত আছেন তিনি। মূলত পটিয়ার সাংসদের গ্রামের তথা শোভনদন্ডীর স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগে প্রভাব খাটান এ কর্মচারী। তার দাপট এতই বেশি যে, খোদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই তার কাছে এক প্রকার অসহায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, দাম্ভিকতার সাথেই তার চলাফেরা। শুধুমাত্র সাংসদের দোহাই দিয়ে মানুষকে হুমকি ধামকিও দিয়ে থাকেন তিনি। তার কাছে কর্মচারী-চিকিৎসক কিংবা কর্মকর্তা সকলেই এক সমান। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সবাই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবী করেন।
এ বিষয়ে জানতে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রবিউল হোসেনকে ফোন করলে তিনি প্রতিবেদক পরিচয় পাওয়ার পর কাজে ব্যস্ত আছি বলে সংযোগ বিছিন্ন করে দেন।
বি.দ্রঃ করোনা টিকা নিয়ে আর্থিক লেনদেন এবং রবিউল হোসেনের আরও দূর্নীতির খবর আসছে পরবর্তী প্রতিবেদনে..