সাতকানিয়া প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর-পশ্চিম ঘাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় দাদার চা-নাশতার দোকানে গিয়ে গত রোববার অতর্কিত সন্ত্রাসীদের গুলিতে শিশু রাফি গুলিবিদ্ধ হয়। রাফি উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর-পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা এলাকার দিনমজুর আবদুর রহিমের ছেলে ও দোকানি শামসুল ইসলাম ওরফে পুতুনের নাতি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার বেলা একটার দিকে শামসুল ইসলামের চায়ের দোকানে বসে ঠান্ডা পানীয় পান করছিলেন কামরুল ইসলাম নামের একজন সাংবাদিক। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে কামরুল ইসলামকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে কামরুল ইসলাম ও দোকানের ভেতরে থাকা শিশু রাফি গুলিবিদ্ধ হয়।
ওই দিন স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ শিশু রাফিকে উদ্ধার করে উপজেলার কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে গুলিবিদ্ধ রাফি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দশম তলার ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। গুলিবিদ্ধ কামরুল ইসলামও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে শিশু রাফির চিকিৎসার খবর নিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি। এসময় তিনি শিশু রাফির চিকিৎসার খবরাখবর নেন এবং উন্নত চিকিৎসা এবং চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে তার পরিবার ও চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। তিনি এসময় শিশু রাফির পরিবারকে চিকিৎসা খরচ নিয়ে চিন্তা না করার পরামর্শ দেন। এবং এই বিষয়টি তিনি নিজে দেখবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।
এসময় তিনি আরও জানান, ‘যে বা যারা আমাদের শান্তিপ্রিয় সাতকানিয়ায় এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ নিরলস কাজ করছে। এই বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলীয়ভবেও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলেও জানান তিনি। এই ঘটনায় তিনি রাফির পরিবারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর আস্থা রাখতে ও অভিযুক্তরা যতই ক্ষমতাধর ও শক্তিশালী হোক না কেন তাদেরকে অতিসত্বর গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির আশ্বাস দেন।
এসময় গুলিবিদ্ধ শিশু রাফির বাবা আবদুর রহিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,’আমি দিনমজুরের কাজ করি। আমার ও আমার ছোট্ট ছেলেটির কোনো দোষ ছিল না। সে দাদার দোকানে চকলেট খেতে গিয়েছিল। তারপরও কেন তারা আমার ছেলেটিকে গুলি করেছে? তারা তারা গন্ডগোল থাকতে পারে। আমাদের সঙ্গে তো কারও কোনো গন্ডগোল নেই।’
রাফির বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানিয়ে আবদুর রহিম বলেন,’আমার ছেলেটির পিঠ দিয়ে ঢুকে পেট দিয়ে গুলি বের হয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে আর কথা বলছে না রাফি। প্রায় সময় চোখ বন্ধ করে রাখছে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুললে শুধু তাকিয়ে থাকছে। এ সময় বুকের ভেতর ধড়ফড় করে। ডাক্তাররা ৮-১০ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার কথা বলেছেন। আর বলেছেন, আল্লাহর ওপর ভরসা করতে। আমার ছেলেকে যারা গুলি করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমি।’
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত বলেন, শিশু রাফিসহ দুজন গুলিবিদ্ধের ঘটনার পরদিন সাংবাদিক কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। শিশু রাফির অবস্থার ব্যাপারে পুলিশ সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। এসময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।’