মো: সেলিম (সাতকানিয়া প্রতিনিধি):
দক্ষিণ চট্টগ্রাম সাতকানিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করা করেছে। টানা কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকায় শঙ্খ নদী, ডলুনদী ও হাঙ্গর খালের পানি বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গত রবিবার (৬ আগস্ট) মধ্যরাতে বাজালিয়া মিরপাড়া এলাকায় শঙ্খ নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যার পানি দ্রুত বাড়তে থাকে।
সোমবার (৭ আগস্ট) সকাল থেকে চট্টগ্রাম বান্দরবান সড়কের দস্তিদার হাটের পূর্বে ও বায়তুল ইজ্জতের পূর্ব সীমান্তে বুড়ির দোকান পর্যন্ত একাধিক স্থানে সড়কের উপর পানি প্রবাহিত হয়ে বান্দরবানের সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়ক কয়েক ফুট তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে সড়কের উভয় পাশে আটকা পড়া মানুষ ভ্যানে পারাপার হচ্ছে।
বন্যায় পুরো উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা দূরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে অন্ধকারে হাজারো পরিবার মানবতার জীবন যাপন করছে।
অপরদিকে সাতকানিয়া থানা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও থানা কম্পাউন্ডে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যায় শত শত মৎস্য পুকুর ডোবে মাছ ভেসে গেছে। ফলে ২০ কোটি টাকার মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে।
পানি উঠেছে হাজারো বসতঘর ঘরে। গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবারের যোগাযোগ ব্যবস্থা। বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নিম্নাঞ্চলের আউশ ধান ও ক্ষেত জমির ফলফলাধি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা। উপজেলার দক্ষিণ চরতি, আমিলাইষ, নলুয়া, খাগরিয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, বাজালিয়া, পুরানগড়, কেঁওচিয়া ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি এলাকায় শংখনদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাজালিয়া এলাকায় শংখনদীর বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় আতংকিত স্থানীয় বাসিন্দারা।
কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান আলী একাত্তর বাংলা নিউজকে জানান, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ১ থেকে ৭ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার মানুষ মূলত গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আমরা তাদেরকে সচেতনতার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি, পরবর্তীতে সরকারীভাবে বরাদ্দ আসলে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা নিয়ে হাজির হবো ক্ষতিগ্রস্থদের ঘরে ঘরে ইনশাআল্লাহ।
অন্যদিকে, আবহাওয়া অফিস বলছে আরো কয়েকদিন ভারী বর্ষণ হবে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেলে পাওয়া তথ্য অনুয়ায়ী উপজেলার দক্ষিণ ঢেমশা, চরতি, নলুয়া, কেঁওচিয়া, আমিলাইষ, খাগরিয়া, বাজালিয়া, ছদাহা ও পুরানগড়, কালিয়াইশসহ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও বিল অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বাজালিয়া, ছদাহা, কেঁওচিয়া সোনাকানিয়া, কাঞ্চনা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল জমিতেও পানি আটকে থাকায় ফল-ফলাদি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডাক্তার অমিত কুমার নাথ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমপাউন্ডে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। তবে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, টানা ভারী বর্ষণে পাহাড় ও ভূমি ধ্বসের আশঙ্কায় পাহাড়ি এলাকায় অবস্থানরত বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করে তাদের জন্য শুকনা খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ মে. টন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরানোর কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার জন্য উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।