মোঃ সেলিম (সাতকানিয়া প্রতিনিধি):
আলোকিত মানুষেরাই সভ্যতা ও সংস্কৃতির গতি, প্রগতি এবং অগ্রগতির ধারক ও বাহক। আর আলোকিত মানুষ তৈরীর জন্য প্রয়োজন আলোকিত আঙ্গিনা। যেখানে তারুণ্যের ক্ষয় নেই, সোন্দর্যের মৃত্যু নেই, জরা-বার্ধ্যক্যের প্রবেশাধিকার নেই থাকে শুধু তারুণ্যেরই পদচারনা। আর এই তারুণ্যকে শিক্ষার আলোয় আরও আলোকিত করতে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক ও বর্তমান সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম.এ মোতালেব সিআইপি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন চিব্বারী এম.এ মোতালেব কলেজ। এম.এ মোতালেব সিআইপির একাত্তর বাংলা নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় প্রতিষ্ঠিত চিব্বারী এম.এ মোতালেব কলেজ প্রতিষ্ঠার পিছনে ইতি কথা।
তিনি বলেন, কর্মজীবনের শুরুতে আমি যখন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলাম তখন দেখতাম বর্তমান সাতকানিয়া-লোহাগাড়াসহ এতদঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই শতকের ব্যবহার জানতো না, তাঁদের যাবতীয় আংকিক হিসাব কুড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকত। আর তাই আমি মনে মনে এতদঞ্চলে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন লালন করি এবং সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর অপেক্ষায় থাকি। ২০১২ খ্রিঃ আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের সেই মহেন্দ্রক্ষনে আমি আমার পরিবারের সকল সদস্য ও এলাকার মান্য-গন্য ব্যক্তিগণের অনুপ্রেরণা ও সমর্থনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলার সংযোগস্থল আমার নিজ চিব্বাড়ী গ্রামের সবুজ শ্যামলিমার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে সাংগঠনিক কর্মকান্ড বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি।
২০১২ খ্রিঃ কলেজ বাস্তবায়নের কাজ শুরুর প্রাক্কালে কলেজের জন্য ৩ (তিন) একর অখন্ড জমির প্রয়োজন দেখা দিলে আমি, আমার স্ত্রী ও পুত্রের নিজ নামে খরিদা জমি কলেজের নামে দান করার উদ্যোগ নেই এবং এলাকার অন্যান্য যাদের জমি সংলগ্ন আছে তাঁরাও বাজার মূল্যের অধিক দামে বিক্রী কিংবা এওয়াজ বদলের মাধ্যমে প্রত্যাশিত ৩ (তিন) একর অখন্ড ভূমির সংস্থান করতে সহযোগিতা করেন। দানপত্র দলিল সম্পাদনের প্রয়োজনে আমি কলেজের নামকরনের প্রস্তাব করলে এলাকাবাসী এবং মান্য-গন্য ব্যক্তিবর্গের চাপে অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমার নিজের নামে কলেজের নামকরণ করতে বাধ্য হই। অত:পর “চিব্বাড়ী এম. এ. মোতালেব কলেজ” প্রতিষ্ঠা করি। ২০১২ খ্রিঃ ৩১শে আগস্ট কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব আলহাজ্ব সৈয়দ আনোয়ার হোসেন তাহেরী আল জাবেরী আল মাদানী সাহেব আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন।
লাগামহীন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে শিক্ষা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যেতে বসেছে। এমতাবস্থায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও দলমত নির্বিশেষে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলাসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের শিক্ষার্থিদের জন্য নামমাত্র স্বল্প ও সহনীয় ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ হতে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার প্রত্যয় নিয়ে কলেজের তিন তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করি। আমার পরিবারের সদস্যগণ এই উদ্দ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং এলাকাবাসী সমর্থন দান করায় তিনতলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ ত্বরান্নিত হয়। অত:পর ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষ হতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হই। ২৪শে মে ২০১৩ খ্রিঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, চট্টগ্রাম এর মাননীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর ড: মোঃ আলী চৌধুরী নির্মিত একাডেমিক ভবনের শুভ উদ্ভোদন করায় এবং ২রা জুলাই ২০১৩ খ্রিঃ মাননীয় কলেজ পরিদর্শক জনাব সুমন বড়ুয়া একাডেমিক কার্যক্রমের শুভ উদ্ভোধন করায় তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
উন্নত জাতি গঠনে সুশিক্ষিত নাগরিকের কোন বিকল্প নেই। তাই সময়ের দাবী ও যুগের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীর মনে অনুসন্দিৎসা, সৃজনশীলতা ও কর্মশক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে গতানুগতিক ও প্রথাগত পদ্ধতি পরিহার করে বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় সক্ষম একটি আত্মপ্রত্যয়ী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে একদল উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী তরুণ, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকরা পাঠদান করে চলেছেন অত্র বিদ্যালয়ে।
আমি বিশ্বাস করি যে, সত্য ও সুন্দরের জয় দেরীতে হলেও অবশ্যম্ভাবী। আমার এই উদ্যোগে এলাকার বিশিষ্টজনদের আন্তরিক সমর্থন আমাকে সেই বিশ্বাস ধারনে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। মুলত: একজন মানুষ হিসেবে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই এতদ্ঞ্চলের দরিদ্র অথচ মেধাবীদের লেখা-পড়া করার সুযোগ সৃষ্টি ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। ইতোমধ্যে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষা সফরের পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজনকে উৎসাহিত করছি। দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবনে সুবিন্যস্ত শ্রেণিকক্ষ, সুপরিসর ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরী, ক্যান্টিন, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক কমনরুম ও নামাজের কক্ষ, প্রসস্থ খেলার মাঠ, সেমিনার কক্ষ এবং মাল্টিপ্রজেক্টর সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব নিশ্চিত করেছি।
পরিশেষে বলতে চাই, মানুষ মানুষের জন্য। আমি সারাজীবন মানুষ, সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। প্রত্যেক মানুষ যাতে স্ব-স্ব প্রতিভা ও সামর্থানুযায়ী সমাজজীবন, ব্যক্তিজীবন ও জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে সৃজনশীল ক্ষমতা নিয়ে অগ্রসর হতে পারে, শিক্ষা তার বাহন হতে পারে। আমার প্রাঙ্গনে যার বীর চরণধ্বনী, উত্তরকালে পৃথিবীর বুকে যেন হয় তারই দীপ্ত পদচারনা এটাই প্রার্থনা করি। বিনিময়ে আমার চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই। আপনাদের দোয়া এবং মহান সৃষ্টিকর্তার করুনাই আমার চলার পথের পাথেয়।