তোফাজ্জল হোসেন:
তিন ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা
আগামী মাস থেকে তিন ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। স্কুলপর্যায় বাদ রেখে আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এসএসসি পরীক্ষার চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না।
সূত্র জানায়, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো শেষ করা লক্ষ্য। এরপর আটকে থাকা স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষার দিকে এগুতে চায় সরকার। এরপর কলেজ তারপর বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো আগে নেওয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে দুদিন পরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচ্ছন্ন করতে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্বস্তরের শিক্ষকদের টিকাদান কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নিতে টাইমলাইন দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিকপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কাজও চলছে জোরেশোরে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান, মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে প্রতি দুদিন অন্তর বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ক্লাসরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা সেটি করছেন। ভ্যাকসিন কার্যক্রমও চলছে।
সম্প্রতি শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের একটি অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, ১৭ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। করোনার এখন যে সংক্রমণ চলছে সেটা কমে এলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা স্কুলগুলো খুলে দিতে চাই। সরাসরি ক্লাস শুরু করা খুব দরকার। স্কুল খুলে দেওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদারকিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা বেশিরভাগই টিকা নিয়েছেন। অবশ্য এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব পরিকল্পনা নির্ভর করছে আগামী এক মাসে কত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা যায় তার ওপর।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, সরকারিপর্যায়ের প্রায় শতভাগ শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। বাকি আছেন প্রায় ৮৪ হাজার জন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ হাজারের বেশি শিক্ষক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের মধ্যে টিকা নিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই সব শিক্ষকই টিকা নিয়ে নেবেন আশা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ছয় হাজার ৭২ জন। এর আগে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে, আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সীমিত পরিসরে কেবল তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। সরকারের ভাবনা হলো, সেপ্টেম্বরে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া সম্ভব হলে এ দুই পাবলিক পরীক্ষার ৪৪ লাখ পরীক্ষার্থী অন্তত আড়াই থেকে তিন মাস সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ পাবে।
এতে তাদের শিখন ঘাটতি অনেকটা মেটানো যাবে। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রমও চলছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শেষ করার পর অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।