শেরপুর প্রতিনিধিঃ
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকাজুড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত ‘কোচ সম্প্রদায়’ নামে আদিবাসীরা দীর্ঘদিন থেকে বন্যহাতির তাণ্ডব মোকাবিলা করে অবহেলিত জীবন-যাপন করে আসছেন। উপজেলার সীমান্ত এলাকার দাওধারা, খলচান্দা ও সমেশ্চুড়া গ্রামে শতাধিক কোচ আদিবাসী পরিবার বসবাস করেন।
এসব পরিবার দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে দিনমজুরি, বন থেকে লাকড়ি সংগ্রহ, বাঁশ দিয়ে ঢোল, ধারাই ও চাটাই তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। কেউবা নিজেদের লাগানো কাসাবা (শিমলা আলু) খেয়েও দিন কাটান। বন্যহাতির তাণ্ডবসহ নানা সমস্যা আর অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন। কেউও নজর দেন না। নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তরে ভারত সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি নিভৃতপল্লী খলচান্দা কোচপাড়া গ্রাম।
সরেজমিন ওই গ্রামের কোচ আদিবাসী পরিমল কোচ (৪০) তাদের জানান, ‘হাতিনি অত্যাচার ছি তংনে মানতাতো’ (আমরা বন্যহাতির অত্যাচারে কষ্টে আছি)। ‘নিন্দ্রা হাতি দেনে ওয়ার, লাইট আরো খুচার লাখাই কারকে রিরু’ (আমরা বন্য হাতিদের আগুন, লাইট এবং ডাক-চিৎকার করে তাড়াই)। বন্যহাতির অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। জানমাল বাঁচাতে শীত কিংবা বৃষ্টি উপেক্ষা করে কষ্টে দিনরাত কাটাতে হয়। এদের অত্যাচারে বাপ দাদার ভিটাবাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যেতে পারি না।’
এদিকে গ্রামবাসী শ্রেষ্ঠ কোচ (৩৮) ও চন্ডি কোচ (৩০) জানান, মাঝে-মধ্যেই বন্যহাতি তাণ্ডব চালয় এই গ্রামে। গাছের কাঁঠাল ও ক্ষেতের ধান পাকার মৌসুমে বন্যহাতির দল খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। এসময় নিষ্ঠুর বন্যহাতির পাল কাঁঠাল, ক্ষেতের ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে সাবাড় করে দেয়। এদের তাণ্ডবে বিনষ্ট হয় ফসলসহ ঘরবাড়ি। তখন এই অসহায় কোচদের টিন পিটিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে, ডাক-চিৎকার ও হৈহুল্লোড় করে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। অনেক সময় মশাল জ্বালানোর কেরোসিন তেল পাওয়া যায় না। তাই দীর্ঘদিনের বন্যহাতির তাণ্ডব যেন তাদের জন্য নিয়তির দেওয়া এক অভিশাপ। তবুও তারা নতুন আশায় বুক বাঁধেন। তাদের দাবি, বন্যহাতির অত্যাচার বন্ধে সরকারিভাবে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।